সংগীত কাকে বলে? সংগীত কত প্রকার ও কি কি?

 সংগীত কাকে বলে?

সংগীত কাকে বলে? সংগীত কত প্রকার ও কি কি?


যে সকল গ্রন্থ পড়ে সংগীতের বিষয় সমুহে জ্ঞান লাভ করা যায় । সে সকল গ্রন্থ গুলোকে সঙ্গীত শাস্ত্র বলে।

সংগীত কত প্রকার ও কি কি

সঙ্গীত শাস্ত্র সাধারণত তিন প্রকারের হয়ে থাকে । 

১. গীত ধায্য (উচ্চাঙ্গ , লঘু সঙ্গীত সম্পর্কিত গ্রন্থ । ) 

২. বাদ্য ধায্য ( বাদ্যযন্ত্র সম্পর্কিত গ্রন্থ ) 

৩. নিত্য ধায্য ( নিত্য সম্পর্কিত গ্রন্থ )

সংগীত কাকে বলে? ( বিস্তারিত আলোচনা)

আবহমান কাল থেকেই বাংলাদেশেই সঙ্গীতের চর্চা চলে এসেছে ।বলা হয়ে থাকে,ধানের দেশ ,গানের দেশ এই বাংলাদেশ। এখানে প্রকৃতির মাঝে সুর আর ছন্দ ,মানুষের কন্ঠে ও পল্লগীতি,ভাটিয়ালি,ভাওয়াইয়া। কৃষাণ কৃষনীর কন্ঠে গান,মেয়েদের কন্ঠে গীত আর বাউলদের েএকতারা তো আছেই। প্রাচীনর যুগেও যে বাংলাদেশে সঙ্গীতের চর্চা হতো তার বড় প্রমাণ বাংলার আদি সাহিত্যক নিদর্শন চর্যাপদ ।এগুলো গীত হতো। ‘রাজতরাঙ্গীত‘তে (৮ ম শতা) বাংলাদেশের কোন এক মন্দিরে সঙ্গীতের উল্লেখ দেখা যায়। চালুক্যরাজ তৃতীয় সোমেশ্বর ‘মানসোল্লাস ’গ্রন্হে (১২২৭-৩৮খ্রি)কৃষ্ণলীলা বিষযক কিছু বাংলা গীতের অংশ বিশেষ উদ্ধৃত করেছেন।

বাংলা সংগীতের স্বরূপ

‘বাঙালিরা সবািই গান করে ‘-এ রকম একটি কথা বিদেশিদের মাঝে প্রচার আছে।ধর্মে ও কর্মে এবং আনন্দে ও বেদনায় এই ছয় ঋতুর দেশের গান একটা বড় ধরনের আশ্রয়।শ্রমের সুর যোগ দিয়ে মানুষ হালকা হতে চায়্ সমবেত সুরে মাঝিমাল্লারা সারি গান গায়। নৌকা বাইচ,ছদপেটানো ও ভারি জিনিস টানতে-ঠেলতে সারি ধরনের গানের বড় প্রয়োজন। গুণ -খুটিয়ে দাঁড় তুলে দিয়ে ভাটির টানে মাঝি ভাটিয়ালি গায়। বর্ষায় বড় নৌকায় আসর জমিয়ে ঘাটে ঘাটে ঘুরে ঘাটু গায়েনরা। উওরবঙ্গে গরু-মোষ যখন নিজের তালে গাড়ি টানে তখন গাড়োয়ান-মৈষাল ভাওয়াইয়া ধরে।সাঁওতাল কিষাণীরা ঝুমুর গানের মত আদিবাসীদের অন্য কোন সুর তেমন প্রভাব বিস্তার করেনি।
কতিতার মত আমাদের গানেরও আদি নিদর্শ চর্যাগীতি। গার্ন্ধব শাস্ত্রের ছত্রিশ প্রবদ্ধ রীতির একটি রুপ হল চর্যা। বিশেষ নিয়ম ছিল সেই প্রবদ্ধ রীতির। লোকসুরে তা নানাভাবে বদলে গেছে। প্রত্যেক চর্যায় শীর্ষে আছে গেয় রাগ-রাগীনীর নির্দেশ। বঙ্গাল রাগের ্উল্লেখ দেখতে পাওয়া যায়। চর্যার বিষয়ভাবে ও সাংকেতিকতার প্রবাব রয়েছে  এদেশের মরমী গানে। ফকির চাঁদ ,লালন শাহ প্রমুখ বাউলরা সুর ও বাণী রবীন্দ্রনাথকেও প্রভাবান্বিত করেছে। চর্যার সমকালীন ,নাথগীতির মধ্যে ময়নামতীর গান পূর্বঞ্চলে বহুদিন ধরে জনপ্রিয় ছিল। রাধাকৃষ্ণের মিলন কাহিনি নিয়ে জয়দেব ‘গীতিগোবিন্দ’রচনা করেন। তাঁর স্ত্রী পদ্নবর্তী সেই গানের নৃত্যরূপ দিতেন।‘গীতিগোবির্দের ধ্রুপদাঙ্গ গায়ন এদেশে হারিয়ে গেছে।তার কীর্তনাঙ্গ গাযন বেঁচে গেল বৈষ্ণব পদকর্তাদের বদৌলতে। কথা পাগল বাঙালির গানে সুর প্রায়শই কথার তাঁতেদারি করে,যদিও কীতর্নে কথাও সুর উভয়ই প্রবল। কীর্তনের আখরকে বলা যেতে পারে কথার খেয়াল।নরোওিম দাসের গরানহাটি ঘরানোর কীর্তনই সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।
মধ্যযুগে মঙ্গলকাব্যে যে দেবীদের বন্দনা তাদের নিয়ে নানান ধরনের গান-পঁছালি বহুদিন ধরে চলে আসছে। পীরের কেরামতি নিয়েও লোকে গান বেঁদেছে। কীর্তন ছাড়াও শ্যামা সংগীত,ভজন প্রভৃতি স্হান করে নিয়েছে।মধ্যযুগের শুরুতেই পশ্চিম থেকে এল আমির খসুরুর খেয়াল।হামদ-নাত ও গজল বয়ে নিযে এল পশ্চিম এশিয়ার শুর। কারবালার স্মৃতি ধরা পড়ল জারি মর্সিয়া শোকগীতিতে। মোঘল দরবার থেকে এসেছে ধ্রুপদ স ংগীতের রেওয়াজ। উনিশ শথতকে কলকাতা ও তার আশেপাশে এবং ব্রাহ্মণ মঝস্বলে জমিদারদের জলসা ঘরে ধ্রুপদ সংগীতের চর্চা অব্যাহত থাকলেও বিশুদ্ধ সংগীতের চর্চা এদেশে জনপ্রিয়তা অর্জন করে নি। পৃষ্ঠপোষকতা ও স্বীকৃতির জন্যে ওস্তাদরা দেশ ছেড়ে চলে গেছেন বাইরে।
ধ্রুপদ খেয়াল ও ঠুংরির সাথে টপ্পা যোগ করে রামনিধি গুপ্ত আধুনির গানের সূএপাত করেন। উনিশ শতকে যে দেশাত্ববোধক গানের শুরু তা এখনও উর্মিমুখর ।চল্লিশের দশকে সাম্যবাদের প্রভাবে এসেছে গণসংগীত ।ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা যুদ্ধে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গান রচিত হয়েছে। আর যে দুইজনের সহস্র সুরে আজ আমাদের সংগীত সমৃদ্ধ  তাঁদের নামেই আজ আমাদের গানরে দুটি প্রধান ঘরানা-রবীন্দ্রসংগীত ও নজরূল সংগীত। সাহিত্য ও চিত্রকরায় যেমন,সংগীতের ইউরোপীয় ভাবধারা তেমন প্রভাব বিস্তার করে নি। তবে নতুন প্রজন্নের কাছে ধ্রুপদী সংগীতের চেয়ে পাশ্চাত্যে পপ এর আকর্ষণই আজ বেশি।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post