১৯৬৬ সালের ছয় দফা দাবি কি কি

 ছয় দফা দাবি কি বা ছয়  দফা দাবির পটভূমি

১৯৬৬ সালের ছয় দফা দাবি কি কি


১৯৬৬ সালের ছয় দঠা কর্মসূচি ভিত্তিক আন্দেলন বাঙালি জাতির জীবনে এক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। পাশ্চাত্যে ব্রিটিশ ঔটনিবেশিক শোষকগোণ্ঠরি নাগপাশ থেকে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান নামক সার্বভৌম রাষ্ট্রের উদ্ভব হলেও , পূর্ব পাকিস্তান কিন্তু অশুভ শোষণের কলো হাত থেক মুক্তি পায় নি। পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিকভঅবে পূর্ব পাকিস্তানকে সুদীর্ঘ ২৪ বছর পর্যায়ক্রমে শোষণ করে। তাই পশ্চিম পাকিস্তানের এ পরিকল্পিত শোষণের হিংস্র দাবানল থেকে মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক ছয় দফা কর্মসূচি পেশ করেন। এ ছয় দফা কর্মসূচির ভিত্তি ছিল ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব । এ চয় দফা বাঙালি জাতির জীবনে  এমন এক পরিবর্তন এনেছে যা পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিবর্তনের এক অনন্যসাধনার ভূমিকা পালন করে।


১৯৬৬ সালের ছয় দফা দাবি কি কি

নিন্মে ছয় দফা দাবিগুলো উপস্থাপন করা হ লো-

১. শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি

১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহেরা পস্তাবের ভিত্তিতে শাসন্ত্র রচনা করে পাকিস্তানকে সত্যিকার যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারে পরিণত করতে হবে। এ যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার হবে পার্লামেন্ট পদ্ধতির। প্রদেশগুলোকে পূর্ণ স্বায়ত্বশাসণ দিতে হবে। পাকিস্তানের আইন  পরিষদ হবে সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের মাধ্যমে।

২. কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা

কেন্দ্রী বা যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের হাতে কেবলমাত্র দেশরক্ষা এবং পররাষ্ট্র এ  দুটি বিষয়ে ক্ষমতা সীমাবদ্ধ থাকবে। অবশিষ্ট সকল বিষয়ে অঙ্গরাজ্যগুলোর পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে। অনবিশিষ্ট সকল বিষয়ে অঙ্গরাজ্যগুলোর পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে।

৩. ‍মুদ্রা ও অর্থ বিষয়ক ক্ষমতা

মুদ্রা ও অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতার ক্ষেত্রে দুটি  বিকল্প প্রস্তাব করা হয়। এ দুটি প্রস্তাবের মধ্যে থেকে যেকোন একটিকে গ্রহণ করা যেথে পারে। প্রস্তাব দু টি নিম্নরূপ
ক) পৃথক মুদ্রা ব্যবস্থা: পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য দুটি পৃথক, অথচ সহজ বা অবাধে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা চালু থাকবে। এ ক্ষেত্রে দু অঞ্চলের জন্য স্বতন্ত্র বা পৃথক স্টেট ব্যাংক থাকবে এবং মুদ্রার পরিচালনা ক্ষমতা থাকবে আঞ্চলিক সরকারের হাতে।
অথবা,
খ)  একই ‍মুদ্রা ব্যবস্থা: দেশের দু অঞ্চলের জন্য একই মুদ্রার ব্যবস্থা থাকবে।  তবে সংবিধানের এমন ব্যবস্থঅ রাখতে হবে যে , যাতে করে এক অঞ্চলের মুদ্রা অন্য অঞ্চলে পাচার  হতে তনা পারে। বিশেষ করে, পূরব্ পাকিস্তন থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে মূলধন পাচার বন্ধ করার জন্য সংবিধানে কার্যকর ব্যবস্থা রাখবে। এ ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পৃথক ব্যাংকিং রিজার্ভের ব্যবস্থাসহ পৃথক অর্থ বিষয়ক নীতি প্রবর্তন করতে হবে।

৪. রাজস্ব কর ও  শুল্ক বিষয়ক ক্ষমতা

সকল প্রকার ট্যাক্স, খাজনা ধার্য ও আদায়ের ক্ষমতা থাকবে আঞ্চলিক সরকারের হাত ে। কেন্দ্রীয় সরকারের এ ব্যাপারে কোন ক্ষমতা থাকবে না। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রয়োজনীয় ব্রয় নির্বাহের জ্ন্য আঞ্চলিক সরকারের আদায়কৃত রাজস্বের একটি অংশ ফেডারিল তহবিলে জমা হবে।

৫. বৈদিশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা

পঞ্চম দফায় বৈদিশিক বাণিজ্য বিষয়ে নিম্নরূপ সাংবিধা িক বিধানের সুপারিশ করা হয়।
ক. ফেডা রেশনভুক্ত প্রত্যেকটি অঙ্গরাজ্যের বহির্বাণিজ্যের পৃথক পৃথক হিসাব রক্ষা করতে হবে।
খ. বহির্বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্জিত বৈদিশিক মুদ্রা অঙ্গরাজ্যগুলো কর্তৃক ব্যবহৃত হবে।
গ. কেন্দ্রে জন্য প্রয়োজনীয় বৈদিশিক মুদ্রার চাহিদা সমান হারে অথবা সর্বসম্মত নির্দিষ্ট হারে অঙ্গরাজ্যগুলো মিটাবে।
ঘ. অঙ্গরাজ্যগুলোর মধে্য দেশজ দ্রব্য চলাচলের ক্ষেত্রে শুল্ক বা কর জাতীয় কোনরূপ বাধা নিষেধ থাকবে না।
ঙ. সংবিধানে অঙ্গরাজ্যগুলোকে বিদেশে নিজ নিজ অঙ্গরাজ্যের বাণিজ্য প্রতিনিধি দল প্রেরণের এবং স্ব স্ব স্বার্থে বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের ক্ষমতা দিতে হবে।

৬. আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা

ক. আঞ্চলিক সংহতি ও জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সংবিধানে অঙ্গরাজ্যগুলোকে স্বীয় কর্তৃত্বাধীনে আধা সামরিক বাহিনী বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা দিতে হবে।
খ.কেন্দ্রীয় সরকারের সকল শাখায় বা চাকরির ক্ষেত্রে প্রতিটি  ইউনিট থেকে জনসংখ্যার ভিত্তিতে লোক নিয়োগ করতে হবে।
গ. নৌবাহিনীর সদর দপ্তর করাচি থেকে চট্টগ্রামে স্থানান্তর করতে হবে।

সুতরাং দেখা যায় যে, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা ছিল মূলত পূর্ব পাকিস্তানবাসী বাঙালিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের দাবি। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একটি স্বতন্ত্র সত্ত্বা হিসাবে বাঁচার দাবি।১৩ মার্চ, ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগ ওয়ার্নিং কমিটির সভায় ছয় দফা কর্মসূচি অনুমোদন করা হয়।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post