ক্ষুধিত পাষাণ গল্পের বিষয়বস্তু ( রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের)

 ক্ষুধিত পাষাণ গল্পের বিষয়বস্তু বা মূলভাব

ক্ষুধিত পাষাণ গল্পের বিষয়বস্তু  ( রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের)


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আধুনিক ছোটগল্পের জনক। তাঁর মাধ্যমেই বাংলা ছোটগল্প পূর্ণতা পেয়েছে। তিনিই ছোটগল্পের সার্থক সৃষ্টিকার। শুধু শিল্প সৃষ্টি হিসেবেই নয়, বাঙালির আশা- আাকাঙ্ক্ষা, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার প্রতিচ্ছবি রবী ঠাকুরের েছোটগল্পে। রবীন্দ্রনাথই প্রথম স্বচ্ছ অনুভূতি ও তীক্ষ্ম অন্তদৃষ্টির মাধ্যমে  গল্পগুচ্ছের সাহয্যে বাঙালি পাঠকের দৃষি্ট  সম্মুখ মেলে ধরেছেন্ শিল্পরীতি জীবনের গভীর সত্যের সথে সম্পৃক্ত। জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত, গতি, যন্ত্রণা, সংঘর্ষ উত্থান পতন ইত্যাদির মাধমে জন্ম নেয় শিল্পরীতির । রবীন্দ্রনাথের ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ এক অতিপ্রাকৃত ছোটগল্প।

ক্ষুধিত পাষাণ এক অতিপ্রাকৃত ছোটগল্পঃ

‘ক্ষুধিত পাষাণ’ রবীন্দ্রনাথের ঠাকুরের অতিপ্রাকৃত গল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম । প্রাচীন ও আধুনিক ভারতীয় সাহিত্যের এ বিশেষ ধরনের গল্পের এমন কলকৌশল রহস্য মিশ্রিত । এসব গল্পে অবাস্তব , অবিশ্বাস্য, অতিলৌকিক, অপূর্ব কল্পনার ঐশ্বর্য, রোমান্সে উচ্ছ্বসিত সুর প্রবাহ বিদ্যমান রয়েছে। ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ গল্পটির পরিবেশ রচিত হয়েছে নদীর তীরে বরী নগেরে প্রায় আড়ািইশ বছর আগের তৈরি দ্বিতীয় শাহ মাহমুদের ভোগবিলা সের নির্জন প্রাসাদে। গল্পাকারের ভাষ ায়, “অনেক অতৃপ্ত বাসনা অনেক উন্মত্ত সম্ভোগের শিখা আলোডিত হইয়াছে। সেই সকল চিত্তদাহে, সেই সকল নিষ্ফল কামনার অভিশাপে িএই প্রাসাদের প্রত্যেকে প্রস্তরে খন্ড ক্ষুধার্ত হইয়াছে, সবীব মানুষ পাইলে তাহাকে লালাইত পিশাচীর মতেরা খাইয়া ফেলিতে চায়” । অনেক সহস্যময় পরিবেশ রবীন্দ্রনাথ ঠপাকুর গল্পটি রচনা করেছেন। গল্পটি মানবমনে ভয় এবং শরিরে নতুন শিহরণ জাগায়। তুলার মাশুল আদায়কারী নির্জন প্রাসাদবাসী যে  ভদ্রলোক গল্পের নায়ক সূর্যাস্তের পরক্ষণে সে আর নিজের মধ্যে থাকে না।

তখন সহস্যময় প্রসাদটি তার চারপাশে একটি ইন্দ্রজাল সৃষ্টি করে  । মাসুষকে প্রাসাদের মধ্যে পবেশের জন্য উদাত্ত আহ্বান করে । তুলার মাশুল আদায়কারীর কাছ থেকে এক একটি রাত এক একটি স্বপ্ন জগতের মতো অতিবাহিত হয়। এই স্বপ্নজগৎ হয়তো শেষ হতো না  যদি না পাগল ামেহের আলী ‘তফাৎ যাও’ বলে চিৎকার করতো। করিম খাঁর সতর্কতা সত্ত্বেও প্রতিরাতে গল্পের কথক প্রাসাদে গমন করতো । গল্পের কথক প্রাসাদে গমন করতিা অন্য এক অলৌকিক শক্তির প্রভাবে। কেননা অনেক বছরের পুরানো প্রাসাদ  এটি। তাছাড়া গভীর রাতে  এ প্রাসাদে প্রাণের স্পন্দন খুঁজে পাওয়া যেত।

যেমন-

“আবার সেইদিন অর্ধরাত্রে বিছানার মধ্যে উঠিয়অ বসিয়া শুনিতে পােইলাম, কে যেন গুমরিয়া গুমরিয়া বুক ফাটিয়া কাঁদিতেছে যেন আমার খাটের নিচে, তেধের নিচে এই বৃহৎ প্রাসাদের পদার্পণ ভিত্তির তলবর্তী একটি আর্দ অন্ধকার ঘরের ভিতর হইতে বলিতেছে, তুমি আমাকে উদ্ধার করিয়া লইয়া যাও। কঠিন মায়া, গভীর নিদ্রা, নিষ্ফল স্বপ্নের সমস্ত দ্বার ভাঙিয়া ফেলিয়া তুমি আমাকে ঘোড়ায় তুলিয়া তোমার বুকের কাছে চাপিয়া ধরিয়া বনের ভিতর দিয়া, পাহাড়ের ওপর দিয়া, নদী পার হইয়া, তোমাদের সূর্যালোকিত ঘরের মধ্যে আমাকে লইয়া যাও”।

‘ক্ষুধিত পাষাণ’ গল্পটির রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের  এক অনবদ্য সৃষ্টি । গল্পটিতে তিনি রহস্যময় পরিবেশের সৃষ্টি করেছেন। গল্পটি েএকটি প্রাচীন  প্রাসাদকে ঘিরে রচিত হয়েছে। প্রাসাদটি প্রায় আড়াইশত বছরেআগের তৈরি যা দ্বিতীয় শাহ মাহমুদের ভোগবিলাসের জন্য ব্যবহৃত  হতো।

প্রাসাদটি অনেক নির্জন ছিল। কিন্তু পাগলা মেহের আলীর ‘তফাৎ যাও’ চিৎকার এর নীরবতা ভেঙে যায়। স্থানীয় করিম খাঁ  গল্পের কথককে রাতে প্রাসাদে ন া ফেরত যেতে সতর্ক করেন। কিন্তু  গল্পের কথক প্রতি রাতে নির্জন প্রাসাদটিতে গমন করতো। তিনি অন্য  এক অলৌকিক শক্তির টানে প্রাসাদে গমন করতেন।

অনেক পুরানো প্রাসাদ হওয়ায় সেখানে গভীর রাতে প্রাণের স্পন্দন পাওয়া যেত। কেউ একজন অসহায় গলায়  নিজের মুক্তি কামনা করতো। যা অতিপ্রাকৃত অবস্থা সৃষ্টি করে। ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ গল্পটি কৌশলের দিক থেকে অনবদ্য বা অনন্য । তার প্রারম্ভিক ভূমিকা স্বল্প পরিসর । সমাপ্তি ও আকস্মিক অন্য একটি গাড়ি আসবার অবসরে স্টেশনের বিশ্রাম কক্ষে গল্পটির বর্ণার সূত্রপাত।  আরেকটি গাড়ি  আসার সাথে সাথেই গল্পের সমাপ্তি ঘটে। এই গল্পের অতিপ্রাকৃত পরিবেশ একান্তভাবে বিত্তবিকারজনিত নয়। পুারতন প্রাসাদের অন্তঃপুরে বাসনাজালে আবদ্ধ দেহহীন লালসময় রূপসীদের অদৃশ্য অবোধ প্রভাবের বলে যেখানে একাধিক  রাত যাপন করেছে তা র শরীর মন  অল্পে অল্পে সেই প্রাসাদের মোহ গ্রাসে জীর্ণ হতে হতে অবশেষে জীবন বা বুদ্ধি  তিরোহিত হয়ে মৃত্যু বা পাগলে রুপান্তরিত হয়েছে। যার জলজ্যান্ত প্রমাণ পাগলা  মেহের আলীর। তুলার মাশুল আদায়কারীরাও এর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারেননি। গল্পাকারের ভাষায়, “সমস্ত রাত্রি ঝড়ও থামে না ক্রন্দনও থামে না।  আমি নিষ্ফল পরিতাপে ঘরে ঘরে অন্ধকা ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিলাম কেহ কোথও নেই, কাহকে সান্ত্বনা করিব। এই প্রচন্ড অভিমান কাহার । এই অশান্ত আক্ষেপ কোথা হইতে উথ্থিত হইতেছে।” গল্পে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রহস্যময়তার সৃষ্টি করেছেন। তার পুরনো প্রাসাদিটিতে প্রাণের স্পন্দন রয়েছে। যার প্রমাণ পাওয়া যায় মেহের আলীর পাগল হয়ে যাওয়া এবং তুলার মাশুল আদায়কারীর  কথাতেও । তাদের কারো মুক্তি মেলেনি এর প্রভাব থেকে।

 ক্ষুধিত পাষাণ গল্পের বিষয়বস্তু সম্পর্কে পরিশেষে যা বলা যায়

পরিশেষে বলা যায়  যে,  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ গল্পটিকে তিনি অতিপ্রাকৃত করে  সৃষ্টি করেছেন। এই সার্থক গল্প। একটি পরনো প্রাসাদকে কিনয়ে গল্পটি রচিত হয়েছে। প্রাসাদটিতে গভীর রাতে প্রাণের স্পন্দন পাওয়া যায়। মুক্তির জন্য আকুতি মিনতি শোনা যায়। এই প্রাসাদেই মেহের আলী পাগল হয়ে যায়। গল্পটির মধ্যে ভৌতিক পরিবেশ, জগৎ নির্মাণ, ভয় ও শিহরণ এক অতিপ্রাকৃত গল্পের সার্থক রূপায়ন।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post