মেঘ ও রৌদ্র গল্পের বিষয়বস্তু
প্রশ্ন ১ঃ
’মেঘ ও রৌদ্র’ গল্পের গঠনকৌশল ও শিল্পসার্থকতা নিরূপণ কর।
অথবা, ‘মেঘ
ও রৌদ্র’ গল্পের মূলভাব আলোচনা কর।
অথবা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘মেঘ
ও রৌদ্র’ গল্পে কীভাবে সমকালীন জীবনের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন?
উত্তরঃ
ভূমিকাঃ রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর আধুনিক বাংলা ছোটগল্পের প্রাণ প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর হাত ধরেই বাংলা ছোটগল্পের সার্থক প্রকাশ ঘটে।
বাঙালির বাস্তব জীবনের দুঃখ-বেদনা, আশা-আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদির প্রকাশ ঘটে ছোটগল্পে। ঔপনিবেশিক শাসনের সময় বাংলার পল্লিগ্রাম যে অর্থনৈতিক গুরুত্ব বহন করে এবং বুর্জোয়া মানবতাবাদের প্রভাবে যে নবতর জীবনবোধ বাংলায় দেখা দেয় এই দ্বৈত প্রবণতাই সম্ভব করেছিল ছোটগাল্পিক হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উজ্জ্বল আবির্ভাব।
‘মেঘ ও রৌদ্র’ গল্পে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর খন্ড জীবনের বীজকে বিদীর্ণ করে অখন্ডের অস্কুর জাগিয়ে তোলার সাধনা করেছেন।
’মেঘ ও রৌদ্র’ গল্পে বাংলার রাজনৈতিক সংগ্রাম প্রকাশিত হয়েছেঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অখন্ডৈর জাগিয়ে
তোলার
সাধনা করেছেন। তাছাড়া সমকালিন জীবন প্রবাহের প্রবাহের ঢেউ চূড়ান্তভাবে আঘাত করেছে এ গল্পের আখ্যানভাগকে।
বস্তুত জাতীয় কংগ্রেসের জন্ম(১৮৮৫)উত্তর এবং বঙ্গবঙ্গ তথা স্বদেশি আন্দোলনের সূচনা(১৯০৫)মধ্যবর্তী সময় বাংলঅর রাজনৈতিক ইতিহাস সংগ্রামের ইতিহাস। সমকালীন জীবন প্রবাহের পরিচয় দিতে গিয়ে প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘’তখন পথেঘাটে ইংরেজদের হাতে দেশীয়দের অপমান, সাহেবদের পদাঘাতে প্লীহা-বিদারণ প্রভৃতি ঘটনা এবং এই গল্পের মধ্যে সন্নিবেশিত করেছিলেন।’’
গল্পে
উল্লেখিত দুটি ঘটনা হচ্ছে ম্যানেজার সাহে নৌকার পালে গুলি করে যাত্রীসহ নৌকা ডুবিয়ে দিচ্ছে। পুলিশ জেলেদের জাল কেটে ফেলছে।
এ ধরনের ঘটনাপ্রবাহকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শশীভূষণ গিরিবালার সমান্তরালে বিন্যস্ত করে কাহিনিকে এগিয়ে নিয়েছেন। সেসময়ের রাজনৈতিক জীবন ও জীটলতা কবির মনের সাথে মননকেও একান্তভাবে আকর্ষণ করেছিল।
‘মেঘ ও রৌদ্র’ যেমন- ‘’জালের উপর ঝাল ঝাড়িয়া অবশেষে জেলেদিগকে ধরিয়া আনিবার আদেশ হইল। কনস্টেবল পলাতক জেলে চারিটির সন্ধ্যান না পাইয়া যে চারিজনকে হাতের কাছে পাইল তাহাদিগকে ধরিয়া আনিবার আদেশ হইল।
কনস্টেবল পলাতক জেলে চারিটির সন্ধ্যান না পাইয়া যে চারিজনকে হাতের কাছে পাইল তাহাদিককে ধরিয়া আনিল। তাহারা আপনাদিগকে নিরপরাধ বলিয়া জোড়হস্তে কাকুতি মিনতি করিতে লাগিল।’’
রবীন্দ্রনাথ যেখানে জীবনশিল্প সেখঅনে বিরোধের মাঝখানে থেমে যাওয়া বা হারিয়ে যাওয়া তাঁর পক্ষে অসম্ভব। দ্বন্দ্বোত্তর সুমিতির মধ্যেই তিনি কমেডিতে স্মিত উজ্জ্বল, অথবা ট্রাজিডিকে করেছেন করুণ মধূর। এই অর্থ বুদ্ধদের বসু বলেছেন ‘মেঘ ও রৌদ্র’ গল্পে বেদনার ধার ভোঁতা হয় না, বেদনা মধূর হয়ে ওঠে। ’মেঘ ও রৌদ্র’ গল্পটি দীর্ঘ আয়তনের। এ গল্পে লেখক দোটানায় নিমজ্জিত।
আকাশে যেমন মেঘ ও রৌদ্রের খেলা তেমনি দুটি অসমবয়সী বন্ধু ক্ষীণদৃষ্টি যুবক শশীভূষণ ও কিশোরী গিরিবালার মান অভিমানের খেলা।
’মেঘ ও রৌদ্রের’ খেলার মতো এ দুটি মানুষের খেলা সামান্য ও ক্ষণস্হায়ী; আবার সামান্য নয় খেলাও নয়। গ্রামের মধ্যে কেউ কেউ দলাদলি, চক্রান্ত, আখেল চাষ, মিথ্যা মামলা ও পাটের কারবারে নিয়ে থাকত। শুধু শশিভূষণ ও গিরিবালা ভাবের আলোচনা ও সাহিত্যচর্চা করতো।
কিন্তু গ্রামের ওপর নেমে আসে দলাদলির দ্বন্দ্ব। ব্রিটিশশাসিত পল্লি বাংলায় অত্যাচারি জমিদার, নায়েব, ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশের খামখেয়ালি ও অধিকার শেষকথা। এ সত্যটুকু এই গল্পে উপস্হাপিত।
কিন্তু লেখক দ্বিধাগ্রস্ত। তিনি কোনোটার প্রতি অনুগত তা জানে না।
শশিভূষণ ও গিরিবালার ভালোবাসার প্রতি নাকি গ্রামবাংলার বাস্তব অঙ্কনের প্রতি। তাই দীর্ঘ দশটি পরিচ্ছেদের মধ্যে কখনো প্রথমটার প্রতি আবার কখনো শেষটার প্রতি অভিব্যক্তি দেখিয়েছেন।
গল্পে
কোমলভাবে শশিভূষণ ও গিরিবালার মান অভিমান মিশ্রিত ভালোবাসাকে তুলে ধরেছেন। একদিন বিকেলে দশ বছরের গিরিবালা শশিভূষণৈর হাত ছড়িয়ে পালাবার ছদ্ম প্রয়াসের মধ্য দিয়ে শশীদাদার কাছে ধরা দিয়েছিল।
আবার একদিন বিকালে শুশুরবাড়ি যাত্রার সময় অবগ্ডন্ঠনবতী অবনতমুখী নববধূ গিরিবালা জানতেও পারেনি যে তার গুরু একবার দৃষ্টি বিনিময়ের আশায় একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। শশীভূষণ চশমা খুলে চোখ মুছে প্রবেশ করলেন।
তার আচমকা মনে হলো যেন গিরিবালা তাকে ডাকল। ‘শশীদাদা কোখায় রে, কোথায়? কোথাও না!’’ সে গৃহে না, পথে না, তাহার অশ্রুজলাভিসিক্ত অন্তরের মাঝখানটিতে। তাদের দুজনের দেখা হলো আবার পাঁচ বছর পর।
ততদিনে
অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ভগ্নস্বাস্হ্য ক্ষীণদৃষ্টি শশীভূষণ পাঁচ বছর কারাবাস করে ভগ্নহৃদয় নিয়ে ফিরে এসেছেন।
এইদিকে কিশোরী গিরিবালা ততদিনে পঞ্চদশী বিধবা। শশীভূষণ ফিরে এলেন তার ফেলে আসা স্মৃতিলোকে।
সেখানে তাদের দুজনের আবার নতুন করে সাক্ষাৎ। এক অচেনা শহরে, অচেনা পরিবেশে শশীভূষণৈর সামনে সাজানো ছিল বিদীর্ণ স্লেট, কয়েকটি পুরনো খাত, কথামাল, কাশীদাসী মহাভারত।সাথে সাথেই শশীভূষণ তার স্মৃতিলোকে ফিরে গেলেন। গল্পের ভাষায়, ‘’যে ঘরে আসিয়া বসিলেন, সে ঘরের চার দিকেই বড়ো বড়ো কাচের আলমারিতে বিচিত্র বর্ণের বিচিত্র মলাটের সারি সারি বই সাজানো। সেই দৃশ্য দেখিবামাত্র তাঁহার পুরাতন জীবন দ্বিতীয়বার কারামুক্ত হইয়া বাহির হইল।....
শশীভূষণ দুই বাহুর মধ্যে মুখ লুকাইয়া সেই টেবিলের উপর স্লেট বহি খাতার উপর মুখ রাখিয়া অনেককাল পরে অনেক দিনের স্বপ্ন দেখিতে লাগিলেন।’’
শশীভূষণেল
জীবনে শেষ পযন্ত বিদ্রোহ প্রতিরোধ নয়, জয়ী হয়েছে প্রেমই। যে পৌরুষের সম্ভাবনায় তার বিদ্রোহ ও প্রতিরোধ চেতনা মুকুলিত হয়েছিল, ঔপনিবেশিক শাসন ও আইনের কানাগলির ধাঁধায় তা অচিরেই ঝরে গেছে। সুদীর্ঘ কারাবাস শশীভূষণকে অপ্রতিরোধ করে তুলেছে।
‘মেঘ ও রৌদ্র’ গল্পটি একটি মহাকব্যিক গল্প। এতে শশীভূষণ ও গিরিবালার প্রেমকাহিনি স্হান পায়নি।
স্হান পেয়েছে সমকালীন প্রেক্ষাপট।
উপসংহার।
পরিশেষে বলা যায় যে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরে ‘মেঘ ও রৌদ্র’ গল্পে একদিকে অসমবয়সীর ভালোবাসার কাহিনি, অন্যদিকে ইংরেজ সরকার ও তাদের দেশীয়দের দ্বারা প্রজাপীড়নের কাহিনি লিপিবদ্ধ হয়েছে। এ গল্পে লেখক দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন।
গল্পে শশীভূষণৈর জীবন কাহিনির কতকগুলো বিচ্ছিন্ন কাহিনির গণ্ডাংশের সমষ্টি বলে সর্বাঙ্গ সুন্দর পরিণতি লাভ করতে পারেনি। গল্পে শশীভূষণেল সুদীর্ঘ কারাবাসই অপ্রতিরোধ্য নিয়তি হয়ে তার জীবনবেদকে প্রতিহত করেছে।
তাই ‘মেঘ ও রৌদ্র’ গল্পটি একটি মহাকাব্যিক গল্প।
প্রশ্ন ২ঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মেঘ রৌদ্র’ গল্পের সার্থকতা বিশ্লেষণ কর।
অথবা, ’’রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
খন্ড জীবনের বীজকে বিদীর্ণ করে অখন্ডের অক্ষুর জাগিয়ে তোলার সাধনা করেছেন ‘মেঘ ও রৌদ্র’ গল্পে।’’ –উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ
ভূমিকাঃ
বাংলা ছোটগল্পের হাতেখড়ি ঘটে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে। তাঁর হাতেই ছোটগল্পের উজ্জ্বল মুক্তি ঘটেছে।
তিনি ছোটগল্পে বাঙালির বাসত্বজীবনের স্বাদ আর সৌরভ, আশা আর আনন্দ, দুঃখ বেদনাকে সুন্দরভাবে উপস্হাপন করেছেন। ঔপনিবেশিক শাসনের কোনো এক পযায়ে বাংলার গ্রামঞ্চল যে অর্থনৈতিক গুরুত্ব অর্জন করে এবং বুর্জোয়া মানবতাবাদের প্রভাবে বাংলায় দেখা যে নবতর জীবনবোধ এসবের মাধ্যমেই ছোট গাল্পিক হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উজ্জ্বল আবির্ভাব।
‘মেঘ ও রৌদ্র’ গল্পে রবীন্দ্রনাথ খন্ড জীবনের জীজকে বিদীর্ণ করে অখন্ডের অস্কুর জাগিয়ে তোলার সাধনা করেছেন।
§ ‘মেঘ ও রৌদ্র’ গল্পের সার্থকতাঃ
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ’মেঘ ও রৌদ্র’ গল্পের বাংলা রাজনৈতিক
ইতিহাস
তুলে ধরেছেন। এই গল্পে তিনি খন্ড জীবনের বীজকে বিদীর্ণ করে অখন্ডের অঙ্কুর জাগিয়ে তোলার
সাধনা করেছেন। সমকালীন জীবন প্রবাহের ঢেউ চূড়ান্তভাবে আঘাত করেছে এ গল্পের আখ্যানভাগকে।
জাতীয় কংগ্রেসের জন্ম এবং বঙ্গভঙ্গ তথা স্বদেশী আন্দোলনের সময় বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাস
সংগ্রামের সমিধ সংগ্রেহের কাল।
রবীন্দ্রনাথের
ব্যক্তিমন ও চূড়ান্তভাবে আন্দোলিত হয়েছিল তার অকাট্য প্রমাণ ‘মেঘ ও রৌদ্র’ গল্পটি।
’মেঘ ও রৌদ্র’ গল্পের সমকালীন জীবন পটভূমির পরিচয় দিতে গিয়ে পভাতকুমার মূখোপধ্যায় বলেছেনঃ
‘’তখন পথে ঘাটে ইংরেজদের হাতে দেশীয়দের অপমান, সাহেবদের পদাঘতে প্লীহা বিদারণ প্রভৃতি
ঘটনা কাগজ পত্রে মাঝে মাঝে প্রকাশিত হইতো। রবীন্দ্রনাথ নিজ অভিজ্ঞতা হইতে দুই একটি
উৎপীড়নের ঘটনা এই গল্পের মধ্যে সন্নিবেশিত করেছিলেন’।’’
এই গল্পের
উল্লেখিত দুটি ঘটনা হচ্ছেঃ একটি ম্যানেজার সাহেব নৌকার পালে গুলি করে এবং যাত্রীসহ
নৌকা ডুবিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। আর দ্বিতীয় হচ্ছে পুলিশ কর্তৃক জেলেদের জাল কেটে ফেলা।
এসব ঘটনাকে রবী ঠাকুর শশীভূষণ গিরিবালার সমান্তরালে বিন্যস্ত করে কাহিনিকে এগিয়ে নিয়ে
গেছেন। সে সময়ে রাজনৈতিক জীবন ও জটিলতা কবির মনকেও চূড়ান্তভাবে আকর্ষণ করেছিল। এর সাথে
চিত্রিত হয়েছে তৎকালীন শাসন ও শোষণ এবং অত্যাচারিত মানুষের জীবন চিত্র।যেমন ‘’জালের
উপর ঝাল ঝাড়িয়া অবশেষে জেলেধিগকে ধরিয়া আনিবার আদেশ হইল।কনস্টেবল পলাতক জেলে চারিটির
সন্ধান না পাইয়া যে চারিজনকে হাতের কাছে পাইল তাহাদিগকে ধরিয়া আনিল।তাহারা আপনাদিগকে
নিরপরাধ বলিয়া জোরহস্তে কাকুতি মিনতি করিতে লাগিল।’’
বিশ্বকবি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেখানে জীবন শিল্পী সেখানে বিরোধের উৎক্ষিপ্ততার মধ্যে হারিয়ে যাওয়া
অসম্ভব। বুদ্ধদেব বসু ‘মেঘ ও রৌদ্র’ গল্পে বলেছেন, বেদনার ধর ভোতা হয় না, বেদনা মধুর
হয়ে উঠে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ’মেঘ ও রৌদ্র’ গল্পটি দীর্ঘ আয়তনের। এ গল্পে লেখক দুটানা
নিমজ্জিত। আকাশে যেমন মেঘ ও রৌদ্র খেলা, তেমনী দুটি অসমবয়সী বন্ধূ ক্ষীণদৃষ্টি যুবক
শশীভূষণ ও কিশোরী গিরিবালার মান অভিমানের খেলা। মেঘ ও রৌদ্র খেলার মতো এ দুটি মানুষের
খেলা ও সামান্য ক্ষণস্হায়ী।পৃথিবীর কোনো কিছূ চিরস্হায়ী নয়। গ্রামের মধ্যে যখন সকলেই
দলাদলি, চক্রানত আখেল চাষ, মিথ্যা মামলা ও পাটের কারবার নিয়ে থাকত তখন কেবল সাহিত্যচর্চা
ও ভাবের আলোচনা করত শশীভূষণ ও গিরিবালা। কিন্তু এই ভাবালোকের ওপর আসে গ্রা্যে সমাজের
দলদলির খড়গ। ব্রিটিশশাসিত পল্লিবাংলায় অত্যাচারী জমিদার, নায়েব, ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশেল
খামখেয়ালি ও অধিকার শেষ কথা এ সতটুকু এই গলে উপস্হিত।
কিন্তু
লেখক দ্বিধাগ্রস্ত। তিনি কি শশীভূষণ গিরিবালার ভালোবাসার প্রতি অনুগত্য প্রকাশ করবেন
নাকি গ্রাম্য জীবনের বাস্তবচিত্র অঙ্কনের প্রতি। দীর্ঘ দশটি পরিচ্ছেদ লেখক এসব তুলে
ধরেছেন। রবীঠাকুর কোমলভাবে শশীভূষণ ও গিরিবালার মান অভিযান মিশ্রিত ভালবাসা তুলে ধরেছেন।
একদিন বিকালে দশ বছরের গিরিবালা শশীভূষণেল হাত ছড়িয়ে পালাবার ছদ্ম প্রয়াসের মধ্যে দিয়ে
শশীদাদার কাছে ধরা দিয়েছিল। আবার গিরিবালা যখন শুশুরবাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হয় তখন সে
জানতেই পারেনি শশীভূষণ তাকে দেখার জন্য অনতিদূরে এ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। শশীভূষণ যখন
চশমা খোলে চোখের পানি মুছে ভিতরে প্রবেশ করল তখন তার কাছে মনে হলো গিরিবালা যেন তাকে
হৃদয় দিয়ে ডাকছে।
দীর্ঘ
পাঁচবছর পর গিরিবালা ও শশীভূষণ আবার দেখঅ হলো। ততদিনে জল অনেকদূর গড়িয়েছে। শশী দীর্ঘ
পাঁচবছর কারাবাস করে ভগ্নহৃদয়ে ফিরে এসেছেন আর গিরিবালা ততদিনে পঞ্চাদশী বিপুবা। শশীভূষণ
ফিরে এলেন তার ফেলে আসা স্মৃতিলোকে। সেখানেই নতুন করে দুজনের সাক্ষাৎ হলো। এক অচেনা
শহরে, অচেনা জায়গায় শশীভূষণের সামনে সাজানো ছিল বিদীর্ণ স্লেট, কয়েকটি পুরনো খাতা ও
কাশীদাসী মহাভারত।সাথে সাথে শশীভূষণ ফিরে এলেন সেই সুখের স্মৃতিরাজ্যে। গল্পের ভাষায়ঃ
‘’যে ঘরে আসিয়া বসিলেন , সে ঘরের চারদিকেই বড়ো বড়ো কাচের আলমারিতে বিচিত্র বর্ণের বিচিত্র
মলাটের সারি সারি বই সাজানো। সেই দৃশ্য দেখিবামাত্র
তাহার পুরাতন জীবন দ্বিতীয় বার কারামুক্ত হইল।.. শশীভূষণ দুই বাহুরে মধ্যে মুখ লুকাইয়া
সেই টেবিলের ওপর সেই স্লেট বহি খাতার ওপর মুখ রাখিয়া অনের কাল পরে অনেক দিনের স্বপ্ন
দেখিতে লাগিলেন। ..শশীভূষণ চোখের সামনে চোখেল সামনে পঞ্চদশী বিধবা গিরিবালাকে দেখতে
পেলেন। তখন দুজনের চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে থাকে। চোখের জলে গল্পটির মিলনাত্নক সমাপ্তি
ঘটে। যা সাদামাটা গল্পটিকে শৈল্পিক রূপ দান করেছে। শশীভূষণের জীবনে শেষ পযন্ত বিদ্রোহ
নয় জয়ী হয়েছে প্রেমেই।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বিশ্বকবি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মেঘ ও রৌদ্র’ গল্পটি একটি মহাকাব্যিক গল্প। এ গল্পে শুধু শশীভূষণ
আর গিরিবালার প্রেমই স্হান পায়নি, স্হান পেয়েছে সমকালীন প্রেক্ষাপেটও। গ্রামের মানুষ
কিভাবে আইন আদালত, প্রশাসনিক ব্যবস্হা, অত্যাচারী জমিদার, ব্রিটিশ রাজাদের দ্বারা নিযাতিত
হয়েছে তার ছবি চিত্রিত হয়েছে ’মেঘ ও রৌদ্র’ গল্পে। গল্পে লেখকের উদ্দেশ্য ছিল দ্বিধ্যগ্রস্ত।
একদিকে অসময়সী ভালোবাসর কাহিনি অপরদিকে সমকালীন জমিদার ও জোতদারদের অত্যাচারের বাস্তব
চিত্র। এ গল্পে শশীভূষণের জীবন কাহিনির কতকগুলো বিচ্ছিন্ন খন্ডাংশের সমষ্টি বলে সর্বাঙ্গ
সুন্দর পরিণতি লাভ করতে পারেনি।
আরো পড়ুন -