রৌদ্র করোটিতে কাব্যের বিষয়বস্তু

 রৌদ্র করোটিতে কাব্যের বিষয়বস্তু

শামসুর রাহমানেররৌদ্র করোটিতেকাব্যের শিল্পমূ্ল্য আলোচনা কর

অথবা, শামসুর রাহমানেররৌদ্র করোটিতেকাব্যে উপমা-উৎপ্রেক্ষা প্রয়োগের সাফল্য বিচার কর

রৌদ্র করোটিতে কাব্যের বিষয়বস্তু শামসুর রাহমানের ‘রৌদ্র করোটিতে’ কাব্যের শিল্পমূ্ল্য আলোচনা কর।


উত্তরঃ বাংলা সাহিত্যের প্রধান আধুনিক কবি শামসুর রাহমান তাঁকে সমকালীন বাংলা কবিতার বরপুত্র বলা হয় দেশীয় ঐতিহ্যকে ধারণ করে তিনি কখনো গোধূলীর রঙে খুঁজে নেন ঘাসের শয্যা কখনো জীবনানন্দের সুরে বলেন, জানতাম একদা তোমার চোখে জারুলের বন ফেলেছে সম্পন্ন ছায়া নদীর মতো শাড়ি এই মুর বাংলাদেশের চিরচেনা, যার স্রোতের টানে কবিতা প্রেমিরা ভাসতে চায়, যার সুঘ্রাণ একটু হলেও গ্রহণ করতে চায় পাঠক মনরৌদ্র করোটিতেশামসুর রাহমানের লেখা বিখ্যাত একটি কাব্য

রৌদ্র করোটিতে’ কাব্যের মূলভাবঃ শামসুর রাহমানের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্হ ‘রৌদ্রকরোটিতে’(১৯৬৩)

কাব্যের কবিতার বিষয় চেতনায় রয়েছে বিষাদখচিত মনোবিশ্ব থেকে উঠে আসা এমন এক প্রতিবেশ পৃথিবীতে যা রৌদ্র ঝলসিত ঝাঁঝালো ক্লান্তিকর স্বপ্নসৌন্দযরহিত কোলাহল কলরোল রচিত যেনো এক পার্থিব নরক ভিখিরির চিৎকার, মাতালের প্রলাপ, পানের দোকানের সামনে অশ্লীল রঙিন জটলা, অন্ধগলির বিমর্ষতা, শাহরিক কোলাহল এবং সর্বোপরি নিজস্ব রোদনসহ উপস্হিত হয় যে প্রতিবেশ তা ঢাকা নামক বস্তি নগর গ্রামের মিশ্র জনপদটির দুঃসহ উপহার ঢাকা পরিণত হয় শামসুর রাহমানের স্নায়ুকেন্দ্র মস্তিস্কে, আর জীবন প্রতিবেশ রূপান্তরিত হয় দুঃস্বপ্ন, কল্পনা কবিতার রক্তমাংস পারিপার্শ্বিকতা থেকে তিনি কেবল উপমা, রূপক প্রতিকের মতো শোভারাশি সংগ্রহ করেননি তাঁর  স্বপ্ন বস্তুলোক গান গদ্য ব্যথিত পীড়িত উল্লাসিত হতে থাকে পারিপার্শ্বিকের অঙুলি সংকেত তিনি লাভ করেন নিঃসঙ্গ ক্লান্তি, চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে স্বপ্ন সৌন্দয বিশ্বাস কাব্যে কখনো শামসুর রাহমানের জগত সম্প্র্রসারিত হয় সমগ্র পৃথিবীতে আবার তিনি ফিরে আসেন কখনো তিনি যাত্রা করেন স্বপ্নলোকের উদ্দেশ্য কিন্তু পরমুহূর্তে ফিরে আসেন অচ্ছেদ্য পারিপার্শ্বিকে  রৌদ্র করোটিকেভূগোল আবহাওয়া পুরনো ঢাকারওই ম্মান অঞ্চলের গালি, উপগলি, খুপরি, পানের দোকান, উস্কি আঁকা সরু গলি ঘিরে রেখেছে তাঁররৌদ্র করোটিতেকাব্যের মনোবিশ্বে দুঃখ আনন্দ বেদনাকে কবিতায় অনেকেই চিত্রায়িত করেছেন কিন্তু এতটা শৈল্পিকভাবে বলেছেন কতজন-

বৃষ্টি-ভেজা নিভন্ত উনুনে আর পুরানো বাড়ির

রাত্রিমাখা গন্ধে আর উপোসী হাঁড়ির

শূন্যতায় দুঃখ তার লেখে নাম”(দুঃখ)

নিজের সুর স্বরকে পরিবর্তন করতে গিযে কবি প্রমাণ করেছেন, তিনি ইতিহাস ঐতিহ্যকে কতটা নিপুণ শেল্পিকভাবে ধারণ করেছেন তাঁর কবিতার রক্তমাংস প্রস্তত করে প্রতিবেশ পৃথিবী কিন্তু কেন্দ্রে অবস্হান করেন শামসুর রাহমান যিনি পুনরাবৃও আত্নব্যাখ্যা বিশ্লেষণে উৎসাহী এবং অক্লান্ত আত্মপ্রতিকৃতি রচনায় নিয়ত পরিবর্তনশীল অথচ এর মর্মমূলে স্হির আত্মচিত্রগুলোর উদ্দেশ্যে কেবল আত্মপ্রকাশ নয়, বরং নিজের কাছে পরিচিত করে তোলা দ্বৈতসত্তার অধিকারী তিনি, একটি আন্তরসত্তা অপরটি বহির্সত্তা এবং বহির্সত্তার তাঁর শরীরও অন্তর্গত মনোবিশ্ব ছাড়া আর সবকিছু এমনকি মনোবিশ্বের কথা রৌদ্র করোটিতে অভিন্ন হয়ে উঠেছে শামসুর রাহমানের কবি পরিচিতির সাথে আর সবকিছু রয়েছে বাইরে বহির্বিশ্বের পরিচয়ে তিনি তর্কপ্রবণ, আত্নপ্রাচারক; আত্মকেন্দ্রিক রক্তমাখা কিন্তু তার আত্মপরিচয়-

অথচ নিঃসঙ্গ বারান্দার

সন্ধ্যা, এভেন্যুর মধ্যরাত্রির স্তদ্ধতা, সার্কাসের

আহত ক্লাউন আর প্রাচীনের অতন্দ্র বিড়াল,

কলোনির জীবনমথিত ঐকতান, অন্সরীর

তারাবেঁধা কাঁচুলি, গলির অন্ধ বেহালাবাদক,

ব্রাকের সুস্হির মাছ, সেঁজার আপেল জানে কত

সহজে আমাকে, জানে কবরের দুর্বিনীত ফুল” (আত্মপ্রতিকৃতি)

শামসুর রাহমানের যারা জানেন অন্তরঙ্গভাবে তিনি যাদেরকে জানেন গভীরভাবে তাদের সঙ্গে রয়েছে অতল জীবন নিস্তরঙ্গ সম্পর্ক বারান্দার সন্ধ্যা, এভেন্যুর মধ্যরাত্রির স্তব্ধতা, প্রাচীরের অতন্দ্র বিড়াল, ব্যর্থ স্বপ্নবিদ্ধ জবিন সার্কাসের আহত ক্লাউন, গলির অন্ধ বেহালাবাদাক জীবন প্রতিবেশ, কলোনির জীবনমথিত ঐকতান, পাশ্চাত্য শিল্পসৌন্দয, ব্রাকের সুস্হির মাছ, সেঁজার আপেল এবং দর্পিত স্বপ্ন সৌন্দয জীবন কবরের দূর্বিনীত ফুল এরা সবাই তার মনোজগতের গভীরভাবে সম্প্রর্কিত

রৌদ্র করোটিতেতিনি যে জীবন প্রতিবেশের অধিবাসী সেখানে তার মনোলোকের সম্পদরাশি সহজেই মূল্যহীন হয়ে উঠেছে তাতে সন্দেহ নেই কোনো কারণেই আত্মপ্রতিকৃতে দেখা যায় যে প্রতিবেশের নিকট তাঁর প্রকৃত সংগোপন রয়েছে যে দুঃসহ জীবন পারিপার্শ্বিকতা তাঁর জীবনকে অর্থহীন করে তুলেছে তার বিবরণ রয়েছে বহু কবিতায়; যেমন- খুপরির গান, ছুঁচোর কেত্তন, পার্কের নিঃসঙ্গ খঞ্জ, আত্মপ্রতিকৃতি, আত্মহত্যার আগে, মেষতন্ত্র, কৃতজ্ঞকতা স্বীকার, খেলনার দোকানের সামনে ভিভিরি, শনাক্ত পত্র, স্বগতভাষণ প্রভৃতি কবিতায় জীবন প্রতিবেশ কর্কশ তার পাত্র-পাত্রী হচ্ছে বাউগুলো ময়লা ভিভিরি আর লম্পট জোচ্ছোর/গন্ডমূর্খ আর ভন্ড ফকির অথবা/অর্ধনগ্ন ভষ্মমাখা উন্মদিনী বেহেড মাতাল এদের জীবন থেকে ঝরে গেছে ময়লা রক্তের মতো

রৌদ্র করোটিতে’ কাব্যের শিল্পমূল্যঃ কবি সর্বপ্রথম কবিতা রচনা করেন তাঁর মনে কাগজের সাদা

     পৃষ্ঠায় স্হান পাওয়ার অনেক আগেই কবিতা বারবার নির্মিত, পুনর্নির্মিত রচিত হয় বিভিন্ন কলাকৌশলের সুখী সম্মিলনে গড়ে ওঠে কবিতা তাতে আছে শব্দসজ্জা, কাক্যনির্মাণ, ছন্দ অনুপ্রাস, মধ্যমিলের মতো শারীরিক কৌশল এবং উপমা, উৎপ্রেক্ষা রূপক চিত্রকল্পের মতো - শারীরিক কলা কবিতা রচিত হওয়ার পর জৈব অবিভাজ্য রূপগ্রহণ করে কিন্তু বিভাজন সম্ভব সবকিছু তনু, মানব শরীর, জটিল যন্ত্র কবিতা সবকিছুকে ক্ষুদ্রাংশে বিভক্ত করা সম্ভব

শামসুর রাহমানের কবিতায় ব্যবহৃত হয়েছে কবিতার সমস্ত কলাকৌশল যেমন অনুপ্রাসের মতো কারুকায আর চিত্রকল্পের মতো জটিল কলায় রয়েছে বৈচিত্র্যমন্ডিত শব্দসজ্জা বাক্যনির্মাণ, ছন্দমিল, মধ্যমিল, উপমা, উৎপ্রেক্ষা রূপক তিনি অবিরল কাব্যে প্রয়োগ করেন উপমা, রূপক উৎপ্রেক্ষা এবং এদের বিস্মৃত ব্যবহারে অজস্রধারায় জন্মে চিত্রকল্পশব্দ সংগ্রহে তিনি অতি উৎসাহী যেকোনে ভূ-ভাগ থেকে বিশেষণের বিভিন্ন আলো আবিষ্কার তাঁর প্রিয় কাজ ছন্দের দিকে তাঁর দৃষ্টি সদাজাগ্রত তাঁর ব্যবহৃত কলাকৌশল রয়েছে সামান্যতম মাত্রাপতন আর চিত্রকল্প যার জন্মভূমি হচ্ছে রূপক, উপমা, উৎপ্রেক্ষা, চিত্রকল্প

উপমা, উৎপ্রেক্ষা প্রয়োগে সাফল্যঃরৌদ্র করোটিতেদেখা যায় প্রায় প্রতিটি স্ববকে স্ববকে অভিনব অভাবিত সাদৃশ্য আবিষ্কার উপমা উপমান সংগ্রহ করতে থাকেন তিনি সকল ভূভাগ থেকে তবে আধুনিক সমকালীন জগৎ তাঁর উপমা সঞ্চয়নের উদার ক্ষেত্র অনেক সময় উপমেয়, উপমান হয়ে উঠতে হয়ে উঠতে থাকে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী

উপমাঃ

. শরীরের মাংস যেন খসে পড়ে যাবে ইতস্তত পচা কমলালেবুর মতো নামমাত্র স্পর্শ, আর (তিনটি বালক)

.আকাশ তো মস্ত একটা গর্ত-সেখানে ঢুকব নেংটি ইঁদুরের মতে(আত্মহত্যার আগে)

.আর স্মৃতিগুলি একপাল কুকুরের মতো খিঁচিয়ে ধারালো দাঁত মনের পেছনে করে তাড়াভাবে(পার্কের নিঃসঙ্গ খঞ্জ)

.পৃথিবীতে সম্পন্ন গাছের পাতা ঝরে হরিণের কানের মতন পাতা ঝরে ধ্বনি ঝরে উজ্জ্বল মাছের রূপালি আঁশের মতো ধ্বনি ঝরে ধ্বনি(পার্কের নিঃসঙ্গ খঞ্জ)

রূপকের ব্যবহারঃ শামসুর রাহমান রূপখচিত রূপক পরিচিতি অবিরল রূপক রচনা তাঁর স্বভাব তাঁর উত্তেজিত উত্তর কাতর আলিঙ্গনে ভিন্ন শরীরে উপমান অভিন্ন শরীরি রূপকে পরিণত হয়েছে যখন নিবিড় সাদৃশ্য ঘোষণা করে উপমের উপমান রক্ষা দুরত্ব করে, পারস্পরিক আকর্ষণে মনের গভীরে কম্পনবোধ করে প্রবিষ্ট হয় না পরষ্পরের মধ্যে তখন জন্মলাভ করে উপমা যেমন-

. ‘’কপালের টিপে,

শয্যার প্রবাল দ্বীপে,

জুতোর গুহায় আর দুধের বাটির সরোবরে

বাসনার মণিকন্ঠ পাখিডাকা চরে

দুঃখ তার লেখে নাম”(দুঃখঃ)

. –কী দেবে জবাব তবে অসংখ্য তারার ব্যালেরিনা’’(খুপরির গান)

চিত্রকল্পের ব্যবহারঃ চিত্রিই চিত্রকল্পের হৃংপিন্ড তবে সব চিত্র বহির্জগতের অনুকৃতি, চিত্রকল্প হয়ে ওঠে না যেকোনো একটি শব্দ বিশেষ্য বিশেষণ বা ক্রিয়া জবানিতে হতে পারে চিত্রকল্পের ঝাড়লুন্ঠন, আবার এদের চেয়ে ব্যাপক বস্তরাশি, উপমা-উৎপ্রেক্ষা- রূপক, প্রযুক্ত হতে পারে কবিতা আজীবন চিত্রকল্প চিত্রকল্পচেতনা বিংশ শতাব্দীর ব্যাপক প্রসার লাভ করে কবির মনে চেতন-অবচেতনভাবে কবিতায় চিত্রকল্প ব্যবহার করেন সরাসরি বক্তব্য প্রকাশ সেখানে ব্যর্থ হয় পাঠকচিত্রে স্বপ্ন কল্পনা চেতনা, আবেগ সঞ্চার করতে সেখানে চিত্রকল্প অর্জন করে উজ্জ্বল সাফল্য

.অথচ নিঃসঙ্গ বারান্দার

সন্ধ্যা, এভেন্যুর আর প্রাচীনের অতন্দ্র বিড়াল,

কলোনির জীবনমথিত ঐকতান, অন্সরীর

তারাবেঁধা কাঁচুলি, গলির অন্ধ বেহালাবাদক,

ব্রাকের সুস্হির মাছ, সেঁজার আপেল জানে কত

সহজে আমাকে, জানে কবরের দুর্বিনীত ফুল”(আত্মপ্রতিকৃতি)

. জানি যারা দেখতে চায় নিষ্কলুষ জ্যোৎন্সার সারস

ঘুমেভরা ডানা দুটি গুটিয়ে রয়েছে বসে ভাঙা

দেয়ালের মস্ত বড় হাঁয়ের ভেতর, (রৌদ্র করোটিতে)

.ঘেয়ো ভিখিরির

ছেড়া ন্যাকড়ার ভাঁজে নক্ষত্রের ছায়া দেখি যদি

৪.কয়েকটি সম্ভ্রান্ত মোটর পাশাপাশি

হঠাৎ হরিণ হতে চেয়ে থমকে দাঁড়িয়েছে বুঝি

রোদচেরা সমুরের গমকে। (দুপুরের মাউথ অর্গান)

৫. তারই স্মৃতি আছে লেগে অদৃশ্য ’চাঁপার উন্মীলনে (আমার মাকে)

৬. রাত্রি তাকে দিল উপহার বিষাদের বিশ্রস্ত তনিমা। (পার্কের নিঃসঙ্গ খঞ্জ)

৭. আবার আমার আত্মা নতুন জন্মের প্রতিভায়

হতে পারে নিবিড় বাগান। (মাথায় ভাবনা নিয়ে)

ছন্দ বিশ্লেষণঃ শামসুর রাহমানের প্রধান অবলম্বন অক্ষরবৃও ছন্দ। তবে তিনি অক্ষরবৃও, মাত্রাবৃও, স্বরবৃও ও গদ্যপদ্য এ চারটি রীতি ব্যবহার করেন।

১.স্বপ্নচারী বিছানায় গড়াই, লড়াই ভাবনার শত্রুদের সাথে।

২. মেষরে মেঘ তুই আছিস বেশ,

মনে চিন্তার নেইকো লেশ।

ডানে বললে ঘুরিস ডানে,

বামে বললে বামে।

হাবে ভাবে পৌঁছে যাবে

সোজা মোক্ষধামে। (মেষতন্ত্র)

উৎপ্রেক্ষার ব্যবহারঃ শামসুর রাহমানের তার কবিতার বিষয় বস্তুর স্বরূপ সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে দিকনির্দেশনা দেওয়ার উৎপ্রেক্ষার ব্যবহার করেছেন। যেমন-

“আড় হয়ে বিকেলের রোদ পড়ে চায়ের আসরে;

কয়েকটি সুবেশ তরুণ-তরুণের সংগত সংলাপে

গোলাপ বাগান জ্বলে রক্তিম কুঁড়ির জাগরণে

মুহূর্তের অতন্দ্র মালঞ্চে।’’(আত্মহত্যার আগে)

আধুনিক কবি শামসুর রাহমান “রৌদ্র করোটিতে’ কাব্যে তিনি বিষয় নির্বাচন ভাষা সংলাপ চিত্রাকল্প, উপমা, উচ্চাক্ষাপ্ত ছন্দ বিশ্লেষণে শৈল্পিক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।

 

 

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post