সরকার কাকে বলে?

 সরকার কাকে বলে? সরকার কী? 

সরকার কাকে বলে?


উওরঃঃ

ভূমিকাঃ

সরকার একটি রাজনৈতিক সংগঠন। আইন বিভাগ,শাসন বিভাগ,বিচার বিভাগ নিয়ে সরকার গঠিত। এ সরকার শব্দটি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে দুটি অর্থে ব্যবহুত হয়। ব্যাপক অর্থে,সরকার বলতে দেশের সকল নাগরিককে বুঝায়। সংকীণ অর্থে আইন,বিচার ও শাসন বিভাগের সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের বুঝায়।

সরকারঃ বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে সরকারের সংজ্ঞা দিয়েছেন। যথাঃ 

অধ্যাপক গেটেল বলেছেন,‘‘Government is the organization or macginery of the state.''অর্থাৎ সরকার হলো রাষ্ট্রের  একটি যন্ত্র বা সংস্হা।

অধ্যাপক গার্নার এর মতে,‘‘সরকার হলো একটি কার্যনির্বাহি মাধ্যমে যার দ্বারা নীতি নির্ধারিত হয় ও সরকারের কাজকর্ম নিয়ন্ত্রিত হয়।’’Willoughby বলেন ‘‘সরকার হলো একটি প্রতিষ্ঠান যার মাধ্যমে রাষ্ট্র তার ইচ্চার বাস্তবায়ন করে।’’

অধ্যাপক লাস্কি বলেন,‘‘রাষ্ট্র ব্যবস্থায় কতিপয় ব্যাক্তি মনোনিত বা নির্বাচিত হয়ে জনগণের মুখপাএ হিসেবে দায়িত্ব পালন করার নাম সরকাল।’’

অধ্যাপক বার্কার এর মতে,‘‘জনগণের স্বার্থে জনগণের অর্পিত ক্ষমতা প্রয়োগকারাী সংঘকে সরকার বলে।

উপসংহারঃ উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে,যাদের উপর রাষ্ট্র পরিচালনার ভার ব্যস্ত এদের সমষ্ট্রিকে সরকার বলে।

সরকারের  সাথে ব্যক্তির সম্পর্ক আলোচনা কর।

উওরঃ

ভূমিকাঃ

সরকারের সাথে ব্যক্তির সুগভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। সরকার ও ব্যক্তি তথা জনসমষ্টি উভয়িই রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এ দুটি উপাদান ব্যতিত রাষ্ট্রের কথা কল্পনা করা যায় না। সরকার বলতে সেই শাসনব্যবস্থা বুঝায় ,যার সাহায্য রাষ্ট্র তার ইচ্ছঅকে প্রকাশ করে ও উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করে। আর সরকার গঠিত হয় ব্যক্তির সমম্বয়ে। সুতরাং সরকারের সাথে ব্যক্তির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিরাজমান।

সরকার ও ব্যক্তির মধ্যকার সম্পর্কেঃ নিম্নে সরকার ও ব্যক্তির মধ্যকার সম্পর্ক আলোচনা করা হলোঃ

১.সংজ্ঞাগত সম্পর্কঃ রাষ্ট্র ব্যবস্থায় কতিপয় ব্যক্তি মনোনিত বা নির্বাচিত হয়ে জনগণের মুখপাএ হিসেবে দায়িত্ব পালন করার নামই সরকার।আর ব্যক্তি বলতে বোন একক মানুষকে বুঝায। একাাধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত হয় জনসমষ্টি। এ জনসমষ্টি মধ্য থেকেই সরকার গঠিত হয়। সুতরাং সরকার ও ব্যক্তির মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান।

২.একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠঃ সরকার ও ব্যক্তি মূলত এক ও অভিণ্ন সওা। কেননা,সরকার গঠিত হয় জনসমষ্টির মাধ্যমেেআর জনসমষ্টি গঠিত হয় ব্যক্তির সমম্বয়ে। সুতরাং একথা বলা যায়,সরকার ও জনসমষ্টি মূল একক হলো ব্যক্তি। তাই অনেকে এদের মধ্যকার সম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এক একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

৩.লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগত সম্পর্কঃ সরকার ও ব্যক্তির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে,সরকারের সার্বিক লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হলো রাষ্ট্র সুশাসন প্রতিষ্ঠা  এবং ব্যক্তির সর্বোচ্চ কল্যাণ নিশ্চিত করা। সুতরাং  একথা বলা হয় উভয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন।

৪.পারস্পরিক সহযোগিতামূলক সম্পর্কঃ সরকার ও ব্যক্তির সম্পর্কের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় সরকার ও ব্যক্তি এক অপরের সহযোগী। কেননা.,সরকার কোন সিদ্ধান্ত বা পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে চাইলে জনগণের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। জনগণের সহযোগিতা ছাড়া সরকার টিকে থাকতে পারে না।

৫.আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনঃ সরকারের মাধ্যমেই জনগণ তথা ব্যক্তির ।আশা আকাঙ্ক্ষার দ্বার উন্নেচিত হয় কেননা ব্যক্তি এককভাবে অনেক কিছু সম্পাদন করতে পারে না। যা সরকার পরিকল্পিতভাবে অতি সহজে সম্পাদন করতে পারে।

৬.একে অপরের পরিপূরকঃ সরকার ও ব্যক্তি একে অপরের পরিপূরক। সরকার ব্যতীত যেমন ব্যক্তি চলতে পারে না ,তেমনি  ব্যক্তি ব্যতিত সরকার গঠিত হতে পারে না। সুতরাং সরকার ও ব্যক্তির  উভয়ের উপর নির্ভরশীল।

উপসংহারঃ উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে একথা বলা যায় যে ,সরকার ও ব্যক্তির মধ্যে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। সরকার ও ব্যক্তি উভয়ে একে অপরের উপর নির্ভরশীল ও পরিপূরক। এ দুটি উপাদান ছাড়া রাষ্ট্রের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না।

সাংবিধানিক বা নিয়মতান্ত্রিক সরকারের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর।

উওরঃ

ভূমিকাঃ

পৃথিবীর প্রতিটি রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সংবিধান রয়েছে। কিন্তু সংবিধান থাকলেই তাকে সাংবিধানিক সরকার বলা যায় না। সংবিধানিক সরকার কার্যকর করার জন্য দরকার একটি উওম সংবিধান। একটি সংবিধানিক সরকারের যেসব বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় তা নিম্নরূপ:

সাংবিধানিক বা নিয়মতান্ত্রিক সরকারের বৈশিষ্ট্যসমূহঃ সাংবিধানিক বা নিয়মতান্তিক সরকার নানাবিধ উপাদান ও বৈশিষ্ট্য বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। নিম্নে তা আলোচনা করা হলঃ

১.সংবিধানের প্রাধান্যঃ সাংবিধানিক সরকারের ক্ষেত্রে সংবিধানের প্রাধান্য বজায় রাখা হয়। অর্থাৎ  এ সরকারের যাবতীয় কার্যক্রম সংবিধাননির্ভর । সংবিধঅন জনগণের স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকারের সংরক্ষক।

২.ক্ষমতার সীমাবদ্ধতাঃ Constitutionalism means to keep the government in order.[Encyclopaedia of social science.Vol.IV ,P -255]সাংবিধানিকতাবাদের মূলকথা হল সরকার চলবে বিধিদ্ধভাবে। অর্থাৎসাংবিধানিক সরকারের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার আছে। লাগামহীন ক্ষমতা ব্যবহারে সাংবিধানিক সরকার পরিচালিত হতে পারে না।

৩.স্থিতিশীল শাসনব্যবস্হাঃ স্থিতিশীল শাসনব্যবস্থা সাংবিধানিক সরকারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ।এ সরকারের কার্যপদ্ধতি ঘন ঘন বা ইচ্ছামাফক পরিবর্তন করা যায় না। সংবিধানে যেসব বিধি লিপিবদ্ধ থাকে তা অবশ্যই হঠাৎকরে সংবিধানে বিরোধি বলে গণ্য হবে না।

৪.আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাঃ নিয়মতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় ব্যক্তির পরিবর্তে আইনের প্রাধান্য রক্ষিত হয়। সেখানে আেইনের শাসন নেই। সেখানে সংবিধানিক সরকার চলতে পারে না। এ সরকার হবে আইনের । তাই বলা যায়,‘‘Lumitation of the government by law.''

৫.দায়িত্বশীলতাঃ এটা দায়িত্বশীর সরকার। শাসনকার্য পরিচালনার জন্য সরকার সকল মাধ্যেমের কাছে দায়িত্ব থাকবে। তাছাড়া সাংবিধানিক সরকার শাসিত জনগণের কাছে নিয়মমাফিক সবসময়েই দায়ী থাকে।

৬.সংবিধানের প্রাধান্যঃ বিচার বিভাগের প্রাধান্য সাংবিধানিক সরকারের অপর একটি বৈশিষ্ট্য। বিচার বিভাগ আইনের ব্যাখ্য প্রদান করে এটা সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না তা নির্ধারণ করে। এভাবে বিচার বিভাগ সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে কার্যসম্পাদন করে থাকে। 

৭.মৌলিক অধিকারঃ সাংবিধানিক সরকার জনগনের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করে। জনগণের মৌলিক অধিকার সরকারের নিকট আমানত হিসেবে সংরক্ষিত থাকে। এরূপ সরকার জনগলের স্বার্থকে নির্বাহী বিভাগ ও আইনসভার স্বেচ্ছাচারের হাত েথকে রক্ষা করে। 

৮.ভারসাম্য প্রতিষ্ঠাঃ সাংবিধানিক সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সামাজিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা,সরকার রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে বিভিন্ন স্বার্থকামী গোষ্ঠির মধ্যে ভারসাম্য আনয়ন করে। অধ্যাপক ফ্রেডারিকের ভাষার,‘‘It is no equipoise of mechanical weight,but rather moving equilibrium of a kalcidoscopie combination of interests.''

৯.গণতান্ত্রিক সরকারঃ সাংবিধানিক সরকার কোন প্রকার স্বৈরাচারী ক্ষমতার উপর প্রতিষ্ঠিত নয়। এ সরকার মূলত স্বেরতন্ত্র বিরোধী ও গণতান্ত্রিক সরকার। জনগণ নির্বাচনরে মাধ্যমে শাসকদের ক্ষমতাচ্যুত করার অধিকার ভোগ করে থাকে। 

১০.ক্ষমতা বন্টনঃ ক্ষমতার বন্টন  বা স্বতন্ত্রীকরণ নিয়মতান্ত্রিক সরকারের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সকল ক্ষমতা একটি বিভাগের হাতে থাকলে সেই বিভাগের উপর কার্যত কোন বাধানিষেধ থাকে না। সাংবিধানিক সরকারের মধ্যে  এবং আইন বিভাগ,শাসন বিভাগ ্ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতা বন্টন করে দেয়া হয়।

১১.প্রকাশ্যতাঃ সরকারি বিষয়দি গোপন নয়,বরং প্রকাশ্যভাবে পরিচালিত হবে। সব যেন জনসাধানণ জানতে এবং তা অনুধাবন করে স্বীয় দায়িত্ব,কর্তব্য ও অধিকার সম্পর্কে সজাগ হয়,সেজন্য কোনকিছূই গোপনীয় থাকে না। সরকারের বিষয় গোপন না থাকলে তা স্বচ্ছতারও দাবি করতে পারে।

১২.জনমতঃ জনমত নিয়মতান্ত্রিক সরকারের একটি অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। জনমতের প্রাধান্য অবশ্যই স্বিকৃত হবে। কে .সি. হুইবার বলেন,‘‘সাংবিধানিক প্রশ্নে জনগণের মতামতকে অবশ্যিই সম্প্রক্ত করতে হবে।’’

উপসংহারঃ উপর্যক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলত পারে যে,সাংবিধানিক সরকার যে কোন জাতির জন্যই কাম্য। কেননা সাংবিধানিক সরকার উওম ও শ্রেষ্ঠ সরকার। এ সরকার জনগণের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করে। তাই বর্তমান বিশ্বে অধিকাংশ দেশেই সাংবিধানিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post