পৌরনীতি ও নাগরিকতা কাকে বলে?

 পৌরনীতি  ও নাগরিকতা কাকে বলে?

পৌরনীতি  ও নাগরিকতা কাকে বলে?


পৌরনীতি ও নাগরিকতাকে বলা হয় নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান। কারণ নাগরিকতার সাথে জড়িত সকল বিষয় পৌরনীতিতে আলোচনা করা হয়। রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের ‘পৌরনীতি’সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। এ অধ্যায় পৌরনীতি ও নাগরিকতার সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন দিক যেমন-পরিবার ,সমাজ ,রাষ্ট্র,রাষ্ট্রর উৎপওি ,সরকার ইত্যাদি আলোচনা স্হান পেয়েছে।

এ অধ্যায় পড়া শেষে আমরা-

  • পৌরনীতি ও নাগরিকতা বিষয়ে ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • পৌরনীতি পাঠের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • পরিবার,সমাজ ,রাষ্ট্র ও সরাকারের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • রাষ্ট্রের উৎপওি সম্পর্কে বণর্ণা করতে পারব।
  • পরিবার ,সমাজ ,রাষ্ট্র ও সরকারের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে পারব।

পৌরনীতি ও নাগরিকতা

পৌরনীতির ইংরোজি শব্দ সিভিক্স (Civics) ।সিভিক্স শব্দটি দুটি ল্যাটিন শব্দ সিভিস (Civis)  এবং সিভিটাস (Civetas) থেকে এসেছে। সিভিস শব্দের অর্থ নাগরিক    (Citizen) আর সিভিটাস শব্দের অর্থ নগর-রাষ্ট্র( City State)।প্রাচীন গ্রিসে নাগরিক ও নগর -রাষ্ট্র ছিল অবিচ্ছেদ্য। ঐ সময় গ্রিসে ছোট ছোট অঞ্চল নিয়ে গড়ে উঠে নগর-রাষ্ট্র। যারা নগর রাষ্ট্রীয় কাজে সরাসরি অংশ্রগ্রহণ করত,তাদের নাগরিক বলা হতো। শুধু পুরুষশ্রেণি রাষ্ট্রীয় কাজে অংশগ্রহনের সুযোগ পেত বিদায় তাদের নাগরিক বলা হতো। দাস,মহিলা ও বিদেশিদের এ সুযোগ ছিলনা। নাগরিকের আচরণ ও কার্যাবলি নিয়ে আলোচনাই ছিল পৌরনীতির বিষয়বস্তু।

বর্তমানে একদিকে নাগরিকের ধারণার পরিবর্ত ঘটেছে,অন্যদিকে নগর-রাষ্ট্রের স্হলে বৃহৎআকারের জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।যেমন-বাংলাদেশের ক্ষেএফল ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার এবং লোকসংখ্যা প্রায় ১৫ কোটি । আমরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। নাগরিক অধিকার ভোগের পাশাপাশি আমরা রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে থাকি। তবে আমাদের মধ্যে যারা অপ্রাপ্তবয়স্ক অর্থাৎ যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে,তারা ভোটদান কিংবা নির্বাচিত হওয়ার মতো রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করতে পারে না।তাছাড়া বিদেশিদের কোনো রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করার সুযোগ নেই। যেমন-নির্বাচনে ভোটদান বা নির্বাচিত হওয়ার অধিকার নেই। মূলত রাষ্ট্র প্রদও নাগরিকের মর্যাদাকে নাগরিকতা বলা হয়। নাগরিকতা ও রাষ্ট্রের সাথে জড়িত সবই ‘পৌরনীতি  ও নাগরিকের বিষয়বস্তু। ব্রিটিশ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ই.এম.হোয়ইট যথার্থই বলেছেন,পৌরনীতি হলো জ্ঞানের সেই মূল্যবান শাখা,যা নাগরিকতার অতীত,বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এবং স্হানীয়,জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবতার সাথে জড়িত সকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা  করে।বিষয়বস্তু দৃষ্টিতে পৌরনীতিকে দুটি অর্থ আলোচনা করা যায়। ব্যাপক অর্থে,পৌরনীতি নাগরিকতার সাথে জড়িত সকল বিষয নিয়ে আলোচনা করে। যেমন-অধিকার ও কর্তব্য ,সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান,নাগরিকতার স্হানীয়,জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয,নাগরিকতার অতীত,বর্তমান ও ভবিষ্যৎ । সংকীর্ণ অর্থে,অধিকার ও কর্তব্য পৌরনীতির বিষয়বস্তু।

সুতরাং বলা যায় ,নাগরিক ,পরিবার ,সমাজ ও রাষ্ট্রের আচরণ ও কার্যাবলি নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনায় মাধ্যমে যে বিষয়টি আদর্শ নাগরিক জীবন  সম্বন্ধে জ্ঞান দান করে,তাকে ‘পৌরনীতি ও নাগরিকতত’ বলা হয়।

 

একক কাজঃ পৌরনীতি ও নাগরিকতার প্রাচীন ও আধুনিক ধারণার পার্থক্য নির্ণয় কর।

 

পৌরনীতি ও নাগরিকতা বিষয়ের পরিসর ব্যাপক ও বিস্তৃত ।নিম্নে আমরা এর পরিসর বা বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব- 

পৌরনীতি ও নাগরিকতা বিষয়ের পরিসর বা বিষয়বস্তু

১. নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্যঃ রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমরা যেমন রাষ্ট্রপ্রদও সামাজিক,রাজনৈতিক ,অর্থনৈতিক ও মৌলিক অধিকার ভোগ করি,তেমনি আমাদেরকেও রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হয়। যেমন-রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ,আইন মান্য করা ,সঠিক সময়ে কর প্রদান করা,সন্তানরেদ শিক্ষিত করা,রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ,আিইন মান্য করা,সঠিক সময়ে নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য ‘পৌরনীতি ও নাগরিকতার বিষয়বস্তু। তাছাড়া সুনাগরিকতার বৈশিষ্ট্য ও সুনাগরিকতা অর্জনের প্রতিবন্ধকতা এবং তা দূর করার উপায় ‘পৌরনীতি ও নাগরিকতা ’ বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

২. সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্টানঃ নাগরিক জীবনকে উন্নত  ও সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্টান ।যেমন-পরিবার ,সমাজ ,রাষ্ট্র ,নির্বাচন ,রাজনৈতিক দল ইত্যাদি। এদের উৎপওি প্রকৃতি ও কার্যাবলি পৌরনীতি ও নাগরিকতা বিষয়ে আলোচনা করা হয়। তা ছাড়া সামাজিক মূল্যবোধ ,আইন ,স্বাধীনতা ও সাম্য ,সংবিধান ,জনমত প্রভৃতি পৌরনীতি ও নাগরিকতার আলোচ্য বিষয়।

৩.নাগরিকতা স্হানীয় ,জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ঃ আমরা যেখানে বাস করি,সেখানে আমাদেরকে কেন্দ্র করে গড়ে ্ওঠে স্হানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।যেমন-ইউনিয়ন পরিষদ,পৌরসভা ,সিটি কর্পোরেশন ইত্যাদি।ঠিক তেমনি নাগরিককে কেন্দ্র করে জাতীয় পর্যায়ে আইন বিভাগ ,শাসন বিভাগ ,বিচার বিভাগ এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কমনওয়েলথ,জাতিসংঘ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এসব স্হানীয়,জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের গঠন,কার্যাবলি ,অবদান এবং নাগরিকের সাথে এসব প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক নিয়ে পৌরনীতি ও নাগরিকতা বিষয়ে আলোচনা করা হয।

৪. নাগরিকতা অতীত,বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ঃ পৌরনীতি ও নাগরিকতা বিষয়টি নাগরিকদের অতীত,বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করে। যেমন-অতীতে নাগরিকতা কীভাবে নির্ণয় করা হতো,নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য কেমন ছিল ,বর্তমানের নাগরিকের মর্যাদা কিরূপ -এসবের উপর ভিওি করে‘পৌরনীতির ও নাগরিকতা’বিষয়টি ভবিষ্যৎ নাগরিক জীবনের দিকনির্দেশনা প্রদান করে।

দলীয় কাজঃ‘পৌরনীতি ও নাগরিকতার ‘ বিষয়টি তোমরা কেন পাঠ করবে দলে আলোচনা করে শ্রেীনিতে উপস্হান কর।

পরিবার 

সমাজ স্বীকৃত বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে স্বামী -স্ত্রীর ্একত্রে বসবাস করাকে পরিবার বলে। অর্থাৎ বৈবাহিক সম্পর্কের ভিওিতে িএক বা একাধিক পুরুষ ও মহিলা ,তাদের সন্তানদি,পিতামাতা এবং অন্যান্য পরিজন নিয়ে যে সংগঠন গড়ে উঠে-তাকে পরিবার বলে। ম্যাকাইভারের মতে,সন্তান জন্নদান ও লালন -পালনের জন্য সংগঠিত ক্ষুদ্র বর্গকে পরিবার বল্ েআমাদের দেশে সাধারণত মা -বারা ,ভাই-বোন ,চাচা-চাচি ও দাদা-দাদির সমন্বয়ে পরিবার গড় উঠে। তবে শুধূ একজন মহিলা বা একজন পুরুষকে পরিবার বলা হয় না। মূলত পরিবার হলো স্নেহ ,মায়া ,মমতা,ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গঠিত ক্ষুদ্র সামজিক প্রতিষ্ঠান 

পরিবারের শ্রেণিবিভাগ 

আমরা সবাই পরিবারে বাস করি। কিন্তু সব পরিবারের  প্রকৃতি ও গঠনকাঠামো এক রকম নয়। কতগুলো নীতির ভিওিতে পরিবারের শ্রেণিবিভাগ করা যায়। যেমন- (ক)বংশ গণনা ও নেতৃত্বে (খ) পারিবারিক কাঠামো ও (গ) বৈবাহিক সূএ।

ক. বংশ গণনা ও নেতৃত্ব ঃএ নীতির ভিওিতে পারিবারকে দুেই ভাগ ভাগ করা যায়। যথা- পিতৃতান্ত্রিক ও মাতৃতান্ত্রিক পরিবার। পিতৃতান্ত্রিক পরিবারে সন্তানরা পিতার বংশপরিচয়ে পরিচিত হয় এবং পিতা পরিবারে নেতৃত্বে দেন। আমাদের দেশের অধিকাংশ পরিবার এ ধরনের । অন্যদিকে ,মাতৃতান্ত্রিক পরিবারে মায়ের বংশপরিচয়ে সন্তানরা পরিচিত হয় এবং মা পরিবার নতৃত্ব দেন। আমাদের দেশে গারোদের মধ্যে এ ধরনের পরিবার দেখা যায়।

খ. পারিবারিক কাঠামোঃ পারিবারিক গঠন ও কাঠামোর ভিওিতে পরিবারকে দুই শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথা-একক ও   যৌথ পরিবার। একক পরিবার মা -বাবা ,ভাই -বোন  নিয়ে গঠিত হয় ।এ ধরনের পরিবার ছোট হয়ে একক। যৌথ পরিবার বড় পরিবার। বাংলাদেশের উভয় ধরনের পরিবার রয়েছে। তবে বর্তমানে একক পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে। মূলত যৌথ পরিবার কয়েকটি একক পরিবারের সমষ্টি।

গ. বৈবাহিক সূএঃ বৈবাহিক সূত্রের ভিওিতে তিন ধরনের পরিবার লক্ষ করা যায়। যথা-একপত্নীক,বহুপত্নীক ও বহুপতি পরিবার। একপত্নীক পরিবারে একজন স্বামীর একজন স্ত্রী থাকে। আর বহুপত্নীক পরিবারে একজন স্বামীর একাধিক স্ত্রী থাকে। আমাদের সমাজের অধীকাংশ পরিবার একপত্নীক ,তবে বহুপত্নীক পরিবারও কদাচিৎ দেখা যায় ।বহুপতি পরিবারে একজন স্ত্রীর একাধিক স্বামী থাকে।বাংলাদেশে এ ধরনের পরিবারে দেখা যায় না।

  

একক কাজঃ শ্রেণিকক্ষে নিচের ছকটি পূরণ কর।

 নীতি /ভিওি                                                                              পরিবারের নাম

১। বংশ গণনা ও নেতৃত্বের ভিওিতে

১।

২।

২। আকার বা কাঠামোর ভিওিতে

১।

২।

৩।বৈবাহিক সূ্ত্রে

১।

২।

৩।

 পরিবারের কার্যাবলি

পরিবারের সদস্যদের সুন্দর ও নিরাপদে জীবন গড়ে তোলার জন্য ‘পরিবার বহুবিধ কাজ করে। পরিবার সাধারণত যেসব কার্য সম্পাদন করে,সেগুলো নিম্নরূপ-

১. জৈবিক কাজঃ আমাদের মা-বাবা   বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ফলেই আমরা জন্নগ্রহণ করেছি েএবং তাদের দ্বারা লালিত-পালিত হচ্ছি। অতএব,সন্তান জন্নদানও লালন-পালন করা পরিবারের অন্যতম কাজ। পরিবারের এ ধরনের কাজকে জৈবিক কাজ বলা হয।

২. শিক্ষামূলক কাজঃ আমাদের মধ্যে অনেকে বিদ্যালয়ে যাওয়ার পূর্বেই পরিবারে বর্ণমালার সাথে পরিচিত হই।তাছাড়া মা-বাবা,ভাই বোন ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের পারস্পরিক সহায়তায় সতত,শিষ্টাচার ,উদারতা ,নিয়মানুবর্তিতা ্  ইত্যাদি মানবিক গুণাবলি শিক্ষা লাভের প্রথম সুযোগ পরিবারেই সৃষ্টি হয়। এগুলো পরিবারের শিক্ষামূলক কাজ। আর পরিবারের শিশূর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় বলে পরিবারকে শাশ্নত বিদ্যালয় বা জীবনের প্রথম পাঠশালা বলা হয।

৩. অর্থনৈতিক কাজঃ পরিবারের সদস্যদের খাদ্য ,বস্ত্র ,বাসস্থান ,শিক্ষা ,চিকিৎসা প্রভৃতি চাহিদা পূরণের দায়িত্ব পরিবারের। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্নভাবে অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে এসব চাহিদা মিটিয়ে থাকে। পরিবারকে কেন্দ্র করে কুটির শিল্প ,মৎস্য চাষ,কৃষিকাজ ,পশু পালন িইত্যাদি অর্থনৈতিক কাজ সম্পাদিত হয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভূতপর্ব উন্নতির ফলে পরিবারের সাথে। সংশ্লিষ্টি কাজের জায়গাগুলোর অনেক ক্ষেত্রে পরিবর্তিত হয়েছে এবং নতুন নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হ্রাস পেয়েছে। তবে আজও পরিবার আমাদের সকর প্রকার অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করছে। 

৪. রাজনৈতিক কাজঃ পরিবার সাধারণত মা-বাবা কিংবা বড় ভাই-বোন অভিভাবকের ভূমিকা পালন করে। আমরা ছোটরা তাঁদের আদেশ -নির্দেশ মেনে চলি। তারা ও আমাদের অধিকার রক্ষায় কাজ করেন। বুদ্ধি ,বিবেক ও আত্নাসংযমের শিক্ষা দেন যা আমাদের সুনাগরিক হতে সাহায্য করে। এভাবে পারিবারিক শিক্ষা ও নিয়ম মেনে চলার মাধওম পরিবারেই শিশুর রাজনৈতিক শিক্ষা শুরু হয়। এ শিক্ষা পরবর্তীকালে রাষ্ট্রীয় জীবনে কাজে লাগে। এছাড়া বড়দের রাজনৈতিক আলোচনা শুনে ও সে আলোচনায় অংশগ্রহণ করে আমরা দেশের রাজনীতি সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠি।

৫. মনস্তাও্বিক কাজঃ পরিবার মায়-মমতা,স্নেহ-ভালবাসা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের মানসিক চাহিদা পূরণ করে। নিজের সূখ -দুঃখ ,আনন্দ -বেদনা পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সাথে ভাগাভাগি করে প্রশান্তি লাভ করা যায়। যেমন-কোনো বিষয়ে মন খারাপ হলে মা-বাবা,ভাই -বোনদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে তার সমাধান করা যায়। এ ধরনের আলোচনা মানসিক শ্রাস্তি -ক্লান্তি মুছে দিতে সাহায্য করে। তাছাড়া পরিবার থেকে শিশু উদারতা,সহনশীলতা ,সহমর্মিতা প্রভৃতি গুণগুলো অর্জন করে যা তাদের মানসিক দিককে  সমৃদ্ধে  করে।

৬. বিনোদনমূলক কাজঃ পরিবারের সদস্যদের সাথে গল্প-গুজব ,হাসি -ঠাট্রা ,গান-বাজনা ,টিভি দেখা,বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যাওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা বিনোদন লাভ করি । বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে পরিবারের উল্লেখিত কাজগুলো কিছুটা হ্রাস পেলে ও সদস্যদের সর্বাধিক কল্যাণ সাধনে পরিবারের এসব কাজের গুরুত্ব অপরিসীম।

 

জোড়ায়/ দলগত কজাঃ ছকের মাধ্যমে পরিবারের বিভিন্ন ধরনের কাজের তালিকা তৈরি কর।

 

পরিবারের কাজের ক্ষেএ

পরিবারের কাজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ/উদাহরণ

১। জৈবিক কাজ

 

২। শিক্ষামূলখ কাজ

 

৩। অর্থনৈতিক কাজ

 

৪।রাজনৈতিক কাজ

 

৫।মনস্তাও্বিক কাজ

 

বিনোদনমূলক কাজ

 

 সমাজ 

সমাজ বলতে সেই সংঘবদ্ধ জনগোষ্ঠীকে বোঝায় যারা কোনো সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য একত্রিত হয়। অর্থাৎ একদল লোক যখন সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সংঘবদ্ধ হয়ে বসবাস করে,তখনই সমাজ গঠিত হয়। সমাজের এ ধারণাটি বিশ্লেষণ করলে এর প্রধান দুটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়।যথা- ক) বহুলোকের সংঘবদ্ধভাবে বসবাস এবং খ) ঐ সংঘবদ্ধতার পেছনে থাকে সাধারণ উদ্দেশ্য। তাছাড়া সমাজের সদস্যদের মধ্যে আরও কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় -ঐক্য ও পারস্পরিক সহযোগিত ,নির্ভরশীলত,ক্রিয়া -প্রতিক্রিয়া ,সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য ইত্যাদি।

সমাজের সাথে মানুষের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। মানুষকে নিয়ে সমাজ গড়ে উঠে। আর সমাজ মানুষের বহুমুখিী প্রয়োজন মিটিয়ৈ উন্নত ও নিরাপদ সামাজিক জীবন দান করে। সমাজের মধ্যেই মানুষের মানবীয় গুণাবলি ও সামাজিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটে। সমাজকে সভ্য জীবনযাপনের আদর্শ স্হান মনে করে বলে মানুষ তার নিজের প্রয়োগনেই সমাজ গড়ে তোলে। গ্রিক দার্শনিক ্অ্যারিস্টল যথার্থই বলেছেন,মানুষ স্বভাবগত সামাজিক জীব,যে সমাজে বাস করে না,সে হয় পশু ,না হয় দেবতা। বস্তুত মানুষ জন্ন থেকে মৃত্য পর্যন্ত সমাজে বসবাস করে এবং সামাজিক পরিবেশেই সে নিজেকে বিকশিত করে।

কাজ ঃ দলে বিভক্ত হয়ে পরিবার ও সমাজের সম্পর্ক নির্ণয় কর।

রাষ্ট্র

 রাষ্ট্র একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান । বিশ্বের সকল মানুষ কোনো না কোনো রাষ্ট্রে বসবাস করে। আমাদের এই পৃথিবীতে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ২০০ টি রাষ্ট্র আছে। প্রতিটি রাষ্ট্রেরই আছে নির্দিষ্ট ভূভন্ড এবং জনসংখ্যা। এ ছাড়া রাষ্ট পরিচালনার জন্য আর ও আছে সরকার এং সার্বভৌমত্ব।  মূলত এগুলো ছাড়া কোনো রাষ্ট গঠিত হতে পারি না। অধ্যাপক গার্নার বলেন,‘সুনিদিষ্ট ভূখন্ডে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী ,সুসংগঠিত সরকারের প্রতি স্বভাবজাতভাবে আনুগত্যশীল,বহিঃশ্এুর নিয়ন্ত্রণ হতে মুুক্ত স্বাধীন জনসমষ্টিকে রাষ্ট্র বলে।;এ সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলে রাষ্ট্রের চারটি উপাদান পাওয়া যায়। যথা-১।জনসমষ্টি ,২। নির্দিষ্ট ভূখন্ড,৩।সরকারও ৪। সার্বভৌমত্ব।

১.জনসমষ্টিঃ রাষ্ট গঠনের অপরিহার্য উপাদান জনসমষ্টি। কোনো ভূখন্ডে একটি জনগোষ্ঠী স্হায়ীভাবে বসবাস করলেই রাষ্ট গঠিথ হতে পারে। তবে একটি রাষ্ট্র গঠনের জন্য কী পরিমাণ জনসমষ্টি প্রয়োজন,এর কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম নেই। যেমন-বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৫ কোটি ,ভারতের জনসংখ্যা প্রায় ১২১ কোটি (২০১১) ,ব্রুনাইয়ে প্রায় দুই লক্ষ। তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানিদের মতে একটি রাষ্ট্রের সম্পদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ জনসংখ্যা থাকা বঞ্ছনীয়।

২. নির্দিষ্ট ভূখন্ডঃ রাষ্ট্র গঠনের জন্য নির্দিষ্ট ভূখন্ড আবশ্যক। ভূখন্ড বলতে একটি রাষ্ট্রের স্থলভাগ,জলভাগ ও আকাশসীমাকে বোঝায়। রাষ্ট্রের ভূখন্ড ছোট বা বড় হতে পারি। যেমন-বাংলাদেশের আয়তন১,৪৭,৫৭০বর্গ কিলোমিটার। তবে বাংলাদেশের ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত স্হল সীমানা চুক্তি অনুযায়ী ২০১৫ সালের ৩১ জূলাই দুদেশের মধ্যে পারস্পরিক ছিটমহল বিনিময়ের ফলে বাংলাদেশের মোট ভূখন্ডে ১০,০৪১.২৫একর জমি যোগ হয়েছে। এছাড়া বঙ্গোপসাগরে মিয়ানমার ও ভারতের সাথে আন্তর্জাতিক আদালতে সমুদ্রসীমা মামলার রায় বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার আয়তন বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে সমুদ্রে ১,১১,৮১৩ বর্গ কি.মি. সমুদ্র অঞ্চলে বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠত হয়েছে। গণচীন,ভারত,মার্কিন ,যুক্তরাষ্ট ,কানাডা প্রভৃতি রাষ্ট্রের  ক্ষেত্রফল বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বড়।

৩. সরকারঃ রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সরকার। সরকার ছাড়া রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না। রাষ্ট্রের যাবতীয় কার্যাবলি সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। সরকার গঠিত হয় তিনটি বিভাগ নিয়ে। যথা-আইন বিভাগ ,শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ । সকল রাষ্ট্রের সরকারের গঠন একই রকম হলেও রাষ্ট্রভেদে সরকারের রূপ। ভিন্ন ভিন্ন। যেমন-বাংলাদেশের সংসদীয় সরকার,আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার। রাষ্ট্রের যাবতীয় শাসনকাজ সরকারেই পরিচালনা করে থাকে। 

৪. সার্বভৌমত্বঃ সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্র গঠেনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। এটি রাষ্ট্রের চরম,পরম ও সর্বোচ্চ ক্ষমতা। এর দুটি দিক রয়েছে ,যথা-অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সার্বভৌমত্ব। অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্বের সাহায্য রাষ্টে দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন আদেশ-নির্দশ জারির মাধ্যমে ব্যক্তি ও সংস্হার উপর কর্তৃত্ব করে। অন্যদিকে,বাহ্যিক সার্বভৌমত্বের মাধ্যমে রাষ্ট্র বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ থেকে দেশকে ‍মুক্ত রাখে।


Post a Comment (0)
Previous Post Next Post