দর্শন কাকে বলে? বাঙালী দর্শনের পটভূমি আলোচনা করা হলো

দর্শন কাকে বলে

দর্শন কাকে বলে? বাঙালী দর্শনের পটভূমি আলোচনা করা হলো


জগত, জীবন ও মানুষের সমাজ সম্পর্কিত চেতনা ও জ্ঞানের প্রক্রিয়া নির্ভর মৌল বিধানের আ লোচনাই দর্শন। মানুষের সামাজিক চেতনার বিকাশের  একটা পর্যায়ে মানুষ কিছু বিশ্লেষণী দৃষ্টি অর্জন করে।  মানুষের চেতনার বিকাশের একটা স্তরে মানুষ তার পরিবেশ সম্পর্কে চিন্তা করতে আরম্ভ করে। দর্শন শব্দটি (দৃশ+ অন) অর্থাৎ দেখ, জানা বা অনুধাবন।  ানুষের অভিজ্ঞতা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে জীবন সমস্যা সমাধানের যে যৌক্তিক ব্যাখ্যা দেখা হয় তাই দর্শনের ভিত্তি। প্রাচীনকালে জীবনের  সমস্যাই দর্শনের বিকাশ ঘটিয়েছে যেখানে । আধুনিককালের প্রয়াস দর্শনকে জীবনের সঙ্গে সম্পর্ক শূন্য অবাস্তব কল্পনীয় রূপ নিয়েছে। কার্ল মার্কসের মতে, দর্শন হবে জীবন ও জগতকে বৈজ্ঞানিক এবং সামগ্রকিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা। জীবন ও জগতের মৌলিক বিধানের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হল দর্শন। সহজে বলা যায়, জীবন ও জগতের সমস্যা নিয়ে চিন্তাই হেএছ দর্শন। দর্শনের মূল প্রশ্ন হিসেবে বিশ্বসত্তার প্রকৃতি, মানুষের জ্ঞানের ক্ষমতা- অক্ষমতার প্রশ্ন, বস্তু ও ভাবের পারস্পরিক সম্পর্ক, মানুষের চিন্তা প্রকাশের প্রকৃষ্ট উপায়  বা যুক্তি দর্শনের আলোচ্র বিষয় হিসেবে গণ্য হয়েছে। দর্শনের এই বিষয়কে মেটাফিজিকসঅধিবিদ্যা বা অতিরিক্ত বিদ্যা বলেও অভিহিত করা হয়।

দর্শনের বিবিধ শাখায় যেসব বিষয় নিয়ে মৌলিক আলোচনা করা হয় তাতে জগত ও জীবনের বিভিন্ন সমস্যা স্থা পায় । বিশ্ব তত্ত্ব, তত্ত্ববিদ্রঅ, জ্ঞানবিদ্যা‍যুক্তিবিদ্যা, নীতিবিদ্যা ও মূল্য বিদ্যা প্রভৃতি শাখায় বিমূর্ত ও বাস্তব বিবিধ প্রসঙ্গ স্থান পায়। প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় দর্শন ছিল যথাক্রমে জাতীয় ও বিশ্বজননীন স্বভাবের।  এ সবের  তুলনায়  আধুনিক দর্শনের স্বভাব আন্তর্জাতিক। আধুনিক দর্শন তাই কোন ব্যক্তি বিশেষ বা জাতি বিশেষের দর্শন নয়। তা বহুহাতির ও বহুব্যক্তিরি নিজ নিজ মাতৃভাষা এবং নিজ নিজ জাতীয় জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে প্রণীত হয়েছে  আধুনিক দর্শন।

বাঙালী দর্শনের পটভূমি আলোচনা কর

বাঙালির দর্শন, বাঙালির দার্শনিক ঐতিহ্য, আবহমান বাংলার মাঠে প্রান্তরে যে দার্শনিকতা ছড়িয়ে আছে, জ্ঞানীগুণী পণ্ডিত বাঙালিজনের যে দর্শন চিন্তা, তার গতিপ্রকৃতি ও স্বরুপ অন্বেষণ বাঙালি জাতির আদি পরিচয়, তার রীতি , আচার, আচরণ,নীতি-আদর্শ , বাঙালির আবাসভূমি ও প্রাকৃতিক পরিবেশ েএবং মননবৈশিষ্ট্য অনুধাবনের মাধ্যমেই সম্ভব - এ বোধ উপলব্ধি থেকেই বাঙালির দর্শন পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।

দর্শন মূলত বোধ, উপলব্ধি ও দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়। ভাষাভিত্তিক ও জাতিতত্ত্ব এবং কৃষিতত্ত্বে যারা বিশ্বাসী, তারা জানেন যে, আবহমান বাংলার সংস্কৃতি, কৃষ্টি, চিন্তা, চেতনা, মনন সাধনা - সবকিছু মিলিযেই বাংলার দর্শন - বাঙালির দর্শন।

বাংলার যেসব চিন্তাধারা দেশ, জাতি ও জনগনেরর সমস্যা, সমস্যার প্রকৃতি ও সমাধান অন্বেষণ করেছে, সমাধানের উপায় খুঁজতে প্রয়াসী হয়েছেন, জগৎ ও জীবিনের সাথে ধারণার মূল্যায়ণ করারা চেষ্টা করেছেন  বিবিধদ বিধানের ভিত্তিতে - তাই বাঙালির দর্শন।

বাঙালির দর্শন বলতে মূলত আমরা বুঝি যুক্তির আলোকে তত্ত্বদর্শনকে সংস্কারমুক্ত মন দিয়ে বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিশ্বাস ও  ধারনার মূল্যায়নকে। জগত ও জীবনের স্বরুপ মূল্যায়ন ও উপলব্ধি করাই হলো দর্শন। প্রজ্ঞার সাথে বুদ্ধির একটি ঘনিষ্ঠ  যোগাযোগ রয়েছে। সে কারণেই প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত উপাত্ত ও তহত্ত্বের বিচার- বিশ্লেষণ  অর্থেই দর্শন কথাটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অর্থাৎ কোন রকম পূর্ব সংস্কার দ্বারা প্রভাবিত না হয়েত মুক্ত বুদ্ধির আলোকে অনুভব, বিশ্বাস ও ধারণার পরীক্ষা- নিরীক্ষা করার জন্য বঙ্গে বসবাসকারী মনীষীদের যে মানসিকতা তাই বাংলা ও বাঙালির দর্শন। 

অন্যভাবে বলা যায়,‘‘প্রাক বৈদিক চিন্তাধারা,বৈদিক চিন্তা ধারা,বেদবিরোধি চিন্তাধারা ,ইসলামি চিন্তাধারা,দেশজমরমীতও্ব এবং পাশ্চাত্যের ধর্মনিরপেক্খ ও বিচারধর্মীর চিন্তাধারা-এই ছয়টি চিন্তাধারায় সমম্বয়ে বাঙালির যে দার্শনিক ভাব গড়ে ওঠেছে তাকেই বাঙালির দর্শ বলা হয়।’’

মোটকথা,জীবন ও জগৎকে কেন্দ্র করে জাতি হিসেবে বাঙালি আবহমানকালে থেকে তার বিশ্বাসে ও সংস্কারে,চিন্তায়ও চেতনায়,মননশীলতাও সৃষ্টিশীলতায় মুক্তবুদ্ধি ও যুক্তির যে চর্চা করে এসেছে তার প্রকৃতি ,স্বরূপ ও ফলাফলকেই বাঙালির দর্শন লাভে অভিহিত করা হয়।

প্রাচীনকাল থেকেই বাংলা অঞ্চল বিদেশিদের দ্বারা শাসিত হয়ে এসেছে ।তা সও্বে ও বাঙালি তার দৃষ্টিভঙ্গি,চিন্তাচেতনা ও মনন সাধনার বিষয়ে সব সময়ই তার স্বতন্ত্র বজায় রেখেছে।জীবন ও জগতে সমাজ ও সংস্কৃতি ,ধর্ম ও দর্শন চর্চায় বাঙালি বাইরের সংস্কৃতি দ্বারা কখনো কখনো প্রভাবিত হলেও নিজস্ব জাতিগত স্বাতস্ত্র্যকে কখনোই বিসর্জন দেয় নি,হারিয়ে যায় নি বহিরাগত ভাবধারায়।বাইরের যা কিছু ভাল তাকে গ্রহণ করে নিজের স্বকীয়তাকে ঋদ্ধ করেছে,গড়ে তুলেছে স্বীয় দার্শনিক ঐতিহ্যকে। ইতিহাসের ধারার বাংলার যে দার্শনিক ঐতিহ্য গড়ে ওঠেছে তাকে তুলেছে স্বীয় দার্শনিকি ঐতিহ্যকে। ইতিহাসের ধারায় বাংলার যে দার্শনিক ঐতিহ্য গড়ে ওঠেছে তাকে আমরা প্রাচীন ,মধ্য,আধুনিক ও সাম্প্রতিক-এই কয়টি স্তরে আলোচনা পযালোচনা করতে পারি।

বাঙালি দর্শনের বৈশিষ্ট্য

বাংলা ও বাঙালির দর্শন কোন সময়ের জন্যই গতিহীন ছিল না। কালের প্রবহমানতায় বাংলায় বিভিন্ন জাতি,গোষ্ঠী,সম্প্রদায় ও শাসক গোষ্ঠীয় আবির্ভাব ঘটেছে। সময়ের আবহে হয়েছে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী ও জাতির উদ্ভৃত চিন্তাধারার ,অনুশীলিত হয়েছে বহিরাগত চিন্তা ও মতবাদের ।বাঙালির দর্শন বিবর্তনের ধারায় ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন মাএা ও বৈচিএ্য লাভ করেছে। এককথায় ,বাঙালির দর্শনবৈশিষ্ট্যে অর্জন করে তার স্বকীয়তার উদ্ভাসে উজ্জ্বল হয়েছে। বিষয় বিন্যাস ও চারিএগত বিচার-বিশ্লেষণে বাংলা ও বাঙালির দর্শনে তাই নিম্মলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো ধরা পড়ে।

১.ঐতিহ্য সমৃদ্ধতা বাঙালি দর্শনের একটি বড় বৈশিষ্ট্য। আনুমানিক দশ হাজার বছর পূর্বে   বাংলার মানব বসতি গড়ে ওঠে। এদের বেশিরভাগ কৌম সমাজভিওিক জনগোষ্ঠি-যেমন       পোদ,শবর,কোল,পুলিন্দ,হাড়ি,ডোম,অদগোপ ।এই আদি মানবগোষ্ঠর সাথে পরবর্তীতে রক্তধারার সংমিশ্রণ ঘটেছে এবং গড়ে ওঠেছে বাঙালি জাতিসওা। তারা ও পওন করেছে বাঙালি সভ্যতার এবং এই ম্যাকানিজম সম্পন্ন হয়েছে খ্রিস্টের জন্নের ও তিন/চার হাজার বছর আগে। এই সংমিশ্রণে ধারায় অংশ নিয়েছে দ্রাবিড়,অস্ট্রিক ,ইউরোপয়েড,আয ও পূর্ব এশিয়ার মঙ্গোলয়েড নৃগোষ্ঠীর মানুষরা।

২সমস্বয়ধর্মীতা বাঙালি দর্শরের আরেকটি লক্ষণীয় দিক। বাঙালির দর্শন,শিল্প,সাহিত্য ও মনন সাধনার তথা দার্শনিক ঐতিহ্য গড়ে কওঠেছে একটি সমস্বয়ী ধারায় । যেখানে প্রধানত ছয়টি চিন্তাধারার সমন্বয় আমরা দেখতে পাই। যেমন-

. প্রাকবৈদিক চিন্তাধারা তথা লোকায়ত দর্শন।

. বৈদিক চিন্তাধারা

. বেদ বিরোধী চিন্তাধারা তথা চার্বাক, জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মমত

 


Post a Comment (0)
Previous Post Next Post