নীতিবিদ্যা কি?নীতিবিদ্যা বলতে কী বুঝায়?

 নীতিবিদ্যা কি? নীতিবিদ্যা বলতে কী বুঝায়?


নীতিবিদ্যা কি?

উওরঃ

ভূমিকাঃ

 জগৎ ও জীবন সম্পর্কি কতকগুলো মৌলিক প্রশ্নের যৌক্তিক অনুসন্ধান হলো দর্শন। দর্শনের একটি শাখা হলো নীতিবিদ্যা । মানুষ ‍বুদ্ধিবৃওিসম্পন্ন সামাজিক জীব। সমাজে বসবাসকারী মানুষের ঐচ্ছিক আচরণের ন্যায়ত্ব,অন্যায়ত্ব,ভঅলোত্ব ,মন্দত্ব,ঔচিত্য,অনৌচিত্য নৈতিক আদর্শের আলোকে মূল্যায়ন করে যে বিদ্যা তা হলো নীতিবিদ্যা।

ব্যুপিওিগত অর্থে নীতিবিদ্যাঃ ইংরেজি ‘Ethos' শব্দর বাংলা প্রতিশব্দ নীতিবিদ্যা। ‘Ethies' শব্দটি উৎপওি গ্রিক শব্দ `Ethica'থেকে,যা `Ethol থেকে উদ্ভুত।`Ethol' শব্দটির প্রকৃত অর্থ ‘চরিএ’‘আচারব্যবহার,‘রীতিনীতি’ বা অভ্যাস। Ethics কে`Moral philosophy'বা নীতিদর্শন নামেও অভিহিত করা হয়।

নীতিবিদ্যাঃ প্লেটোর দুটি গ্রস্হ ্ক্রিটো ও ‘অ্যাপোলজি থেকে সত্রেটিস এর জীবনধারা বা চরিএ ও বিশ্বাস সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। দুটি গ্রস্হ থেকে দুটি বিষয় পরিলক্ষিত হয়।এক .মৃত্যূদন্ডকে পরিহার করার জন্য সক্রেটিসের বন্ধূরা সক্রেটিসকে পালিয়ে যেতে বললে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে  কতকগুলো যুক্তি উপস্থাপন করেন। দুই,সত্রেটিসের জীবনধারায় কতকগুলো বিষয়ের পরিচর্চা বা অনুশীলন পরিবর্তন করার জন্য বিচারকরা প্রস্তাব দিলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে হেমলক পান করে জীবন উৎসর্গ করাটা শ্রেয় মনে করেন। যে পরীক্ষিত বা যাচাই করা জীবনের দিকে সক্রেটিস তার অধিক সময় ব্যয় করেন এবং যে জীবনের স্বার্থে সক্রেটিস তাঁর জীবন বিসর্জন দিতেও কুন্ঠাবোধ করেন নি,তার অনুসন্ধানকেই অধিকাংশ দার্শনিক নাম দিয়েছেন নীতিবিদ্যা।

প্রমাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন নীতিবিদ নীতিবিদ্যাকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিম্নে তাদের প্রদও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা  উপস্থাপন করা হলোঃ

উইলিয়াম কে. ফ্রাংকিনা (William K. Frankena) এর মতে, ‘‘নীতিবিদ্যা দর্শনের এমন একটি শাখঅ যা নৈতিকতা, নৈতিক সমস্যা ও নৈতিক অবধরণ সম্পর্কীয় এক ধরনের দার্শনিক চিন্তাভাবনা ।’’(Ethics is moral philosophy or philosophical thinking about morality,moral problims and moral judgemens.)

উইলিয়াম লিলি (William Lillie) এর মতে ,নীতিবিদ্যা সমাজে বসবাসকারী মানুষের আচরণে সম্পর্কীয় একটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান ,যে বিজ্ঞান মানুষের আচরণেকে উচিত কী অনুচিত, ভালো কী মন্দ,সত্য কী মিথ্যা বা অনুরূপভাবে বিচার করে।

ম্যাকেজি(Mackenzi )এর মতে,‘‘নীতিবিদ্যা হলো আচরণের মঙ্গল বা ্‌ঔচিত্যর আলোচনা। 

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে ,নীতিবিদ্যা মানবজীবনের পরম কল্যাণ লাভে সহায়ক। যে নৈতিক নিয়মগুলো পালন করলে তার জীবনের পরম কল্যাণ লাভ করতে পারে  সে নিয়মগুলো নির্ধারণ করার চেষ্ঠা করে নীতিবিদ্যা।

জীব নীতিবিদ্যা কি? জীব নীতিবিদ্যা বলতে কী বুঝ?জীব নীতিবিদ্যা কাকে বলে?

উওরঃ

ভূমিকাঃ

বাস্তব জীবনে যে নৈতিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে সেসব সমস্যার নৈতিক সমাধান দেয় প্রায়োগিক নীতিবিদ্যা । বিজ্ঞানের আবিষ্কার আমাদের জীবন একদিকে আরমপ্রদ করেছে আবার অন্যদিকে ,বিস্তর সমস্যা তৈরি করেছে । যেমন-িএসিড ,লিকুইড প্যারাসিটামল (যেটা শিশুদের কিডিনি নষ্ট করেছে) । সুতরাং মানুষের জীবন প্রণালী সম্পর্কে নীতিবিদ্যার আলোচনা করা হয়ে থাকে।

জীব নীতিবিদ্যাঃ প্রায়োগিক নীতিবিদ্যার একটি ভাগ হলো জীব নীতিবিদ্যা । এটি প্রথম শুরু হয় জীব চিকিৎসা নীতিবিদ্যা নামে। জীব নীতিবিদ্যা মূলত জীবনকেন্দ্রিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে এবং এক্ষেত্রে মূলত শারীরিক সমস্যায় মূখ্য ভূমিকা পালন করে। পিটার সিঙ্গার বায়ো -এথিক্সকে স্বাস্হ্যসেবা এবং এসব সমস্যাবলির সাথে সম্পর্কিত সমস্যার নীিতসম্মত অনুশীলনের কথা বলেন। এসব সমস্যার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রধানত তিনটি দিক যেমন-সামাজিক,আইনগত এক অর্থনৈতিক সমস্যাবলির কথা উল্লেখ করেছেন। প্রায়োগিক নীতিবিদ্যার যে শাখা নৈতিক নীতিমালার আলোকে ব্যক্তি মানুষের জীবন সম্পর্কি ব্যক্তিগত নৈতিক সমস্যঅ ,পরস্পরের মধ্যকার সম্পর্ক ও আচরণ সম্পর্কি আলোচনা করে,যা ব্যক্তিজীবন ও সমাজজীবনের উপর গভীর প্রভঅব ফেলে তাই জীব নীতিবিদ্যা।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে , একটি আদর্শ বা মানবদন্ডের আলোকে মানুষের নৈতিক আচরণকে মূল্যায়ন করে নীতিবিদ্যা ।প্রায়োগিক নীতিবিদ্যার গুরূত্বপূর্ণ শাখা হল নীতিবিদ্যা ।সুতরাং নীতিবিদ্যায় জীব নীতিবিদ্যার গুরূত্ব অনস্বীকার্য। 

নীতিবিদ্যার ও মনোবিদ্যার মধ্যে সাদৃশ্য আলোচনা কর।

উওরঃ

ভূমিকাঃ

নীতিবিজ্ঞান মানুষের আচরণ সম্পর্কীয় বিজ্ঞান। আর মনোবিজ্ঞান মানুষের আচরণ সম্পর্কীয় বিষয়নিষ্ঠ বিজ্ঞান। নীতিবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞান উভয়ই মানসিক বিজ্ঞান। মনোবিজ্ঞান নীতিশাস্ত্রের ভিওি। ব্যক্তির আচরণকে সঠিকভাবে বুঝার জন্য মনস্তাও্বিক বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান থাকা দরকার বলে নীতিবিদ্যার সাথে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্কে থাকা খুবই স্বভাবিক। 

নীতিবিদ্যাঃ ইংরেজি‘Ethics' শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ নীতিবিদ্যা । `Ethics'শব্দটির উৎপওি গ্রিক শব্দ`Ethica  থেকে ,যা ‘Ethos'থেকে উদ্ভুত। মানুষের অভ্যাসজাত আচরণেই নীতিবিদ্যার আলোচ্যবিষয়। নীতিবিদ্যা সমাজে বসবাসকারী মানুষের ঐচ্ছিক ক্রিয়ার ভালোত্ব ,মন্দত্ব,ঔচিত্য ,অনৌচিত্য প্রভৃতির লক্ষ ও নিয়ম নির্ণয়ের চেষ্টা করে । সুতরাং নীতিবিদ্যা হচ্ছে মানুষের রীতিনীতি সম্পর্কীয় বিজ্ঞান। 

মনোবিদ্যাঃ মনোবিদ্যঅ মানুয়ের আচরণ বা ব্যবহার সম্পর্কীয় একটি বিষয়নিশ্ঠ বিজ্ঞান। পারিপার্শ্বিকতার সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তির ক্রিয়াবসি সম্পর্কে আলোচনা করতে মনোবিদ্যা মানব ক্রিয়ার বিভিন্ন রূপ ও তাদের বিশেষ বৈশিষ্ট্যাগুলোর আলোচনা করে। আধুনিক মনোবিজ্ঞানীদের মতে,মনোবিজ্ঞান হলো আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়াসমূহের বিজ্ঞানসম্মত পর্যালোচনা।

নীতিবিদ্যা ও মনোবিদ্যার মধ্যে সাদৃশ্যঃ নীতিবিদ্যা ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে কিছু সম্পর্ক বা সাদৃশ্য রয়েছে ,যা নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ

 প্রথমত,নীতিবিদ্যা বা নীতিবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞান উভয়ই মানসিক বিজ্ঞান। উভয় বিজ্ঞানই মনের বিভিন্ন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে। নীতিবিজ্ঞান মানুষের আচরণ সম্পর্কীয় একটি আদৃশনিষ্ঠ বিজ্ঞান এবং এর লক্ষ্য মানুষের জীবনের পরম কল্যাণ বা পরমার্থের স্বরূপ নির্ধারণ করা । এ পরমকল্যাণের আদর্শের সহায়তার আমরা মানুষের আচরণ ভালো ,কি মন্দ তা বিচার করি এবং মানুষের উদ্দেশ্য বা অভিপ্রায়ের নৈতিক মূল্য নির্ধারণ করি। সুতরাং এদিক থেকে উভয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। 

দ্বিতীয়ত,ঐচ্ছিক,অনৈচ্ছি ও  ইচ্ছ-নিরপেক্ষ ক্রিয়াবলিকে তাদের মৌলিক উৎপওি ও ্ক্রমবিকাশর প্রেক্ষিতে মনোবিদ্যায় ব্যাখ্যা করা হয়। নীতিবিদ্যায় আচরণ সম্পর্কীয় মতবাদ গঠন করতে মনোবিদ্যঅর এসব আলোচনার ফলাফলকে বিবেচনা ও মূল্যায়ন করে। তাই নীতিবিদ্যা ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

তৃতীয়ত,সিজউইক (১৮৩৮-১৯০০)তাঁর  `Outlines of the History of Ethics' গ্রন্হে নীতিবিদ্যা  ও মনোবিদ্যার সমস্যা প্রসঙ্গে বলেছেন,‘‘প্রায় সব নীতি দার্শনিক সম্প্রদায় এটি স্বীকার করতেন যে ,তাঁদের অনুসন্ধানের প্রধান বিষয় অবশ্যই মানবজীবনের মনস্তাও্বিক দিকের অন্তর্ভুক্ত। বিভিন্ন পন্সায় নৈতিক প্রশ্নাবলি মনস্তাও্বিক আলোচনার দিকে অনিবার্যেভাবে পরিচালিত হয়ে থাকে। বস্তুত আমরা বলতে পারি যে ,সকল গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক ধারণা মনস্তাও্বিক বটে। ‘‘এসব দিকের আলোচনার পেক্ষিতে বলা যায় যে,নীতিবিদ্যা মনোবিজ্ঞানের  বেশ সম্পর্ক বা সাদৃশ্য রয়েছে । 

চতুর্থত

নীতিবিদ্যা   ও মনোবিজ্ঞান মধ্যে বৈসাদৃশ্যঃ নীতিবিদ্যা ও মনোবিদ্যার মধ্যে সাদৃশ্য থাকা সও্বেও উভয়ের মধ্যে কতকগুলো বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয় ।নিম্নে এগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ

প্রথমত,মনোবিদ্যা মানব আচরণ সম্পর্কীয় একটা বিষয়নিষ্ঠ বিজ্ঞান। মনোবিদ্যা কোন আদর্শ বা মানদও্রের প্রেক্ষিতে মানব ক্রিয়ার বচারবিবেচনা না করে কেবল মানব ক্রিয়ার  প্রবৃক স্বরূপ সম্পর্কে আলোচনা করে। অপরদিকে নীতিবিদ্যা আচরণ সম্পর্কীয় বিষয়নিষ্ট বা বর্ণনামূলক বিজ্ঞান নয়,বরং আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। কেননা নীতিবিদ্যঅ মানব আচরণের  ্ওচিত্য-অনৌচিত্য নিয়ে আলোচনা করে।

দ্বিতীয়ত,মনোবিদ্যঅ বিষয়নিস্ঠ বিজ্ঞান তাই উভয়েরই পদ্ধতিগত পার্থক্য বিদ্যমান। মনোবিদ্যায় মানব ক্রিয়ার  আলোচনার ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগার বা পরীক্ষণ পদ্ধতির স্থান রয়েছে। পক্ষান্তরে ,নীতিবিদ্যা আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান নীতিবিদ্যায় মানব ক্রিয়ার বা আচরণের ন্যায়ত্ব-অন্যায়ত্ব বা ভালোত্ব-মন্দত্ব নিয়ে আলোচনা করার ক্ষেত্রে মনোবিদ্যার মতো কোন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগার বা পরীক্ষণ পদ্ধতির স্থান নেই।

তৃতীয়ত,মনোবিদ্যঅর পরিসর নীতিবিদ্যার চেয়ে ্ব ব্যাপক। মনোবিদ্যা মানসিক প্রক্রিয়ার সবকিছু নিয়ে আলোচনা করে। মনোবিদ্যা মুখ্যবিদ্যাষ্লায়ুতন্ত্র থেকে শুরু করে মানসিক প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত সব আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়েও আলোচনা করে। পক্ষান্তরে ,নীতিবিদ্যা মুখ্যভাবে ঐচ্ছিক ক্রিয়া নিয়ে এবং গৌণভাবে চিন্তন ও অনুভূতি নিয়ে আলোচনা করে।

চতুর্থত,মনোবিদ্যঅ সাম্প্রতিককালে অন্যান্য বর্ণণামূলক বিজ্ঞানের মতো একটি স্বতন্ত্র বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত বলে,মনোবিজ্ঞানের আলোচনার দৃষ্টিভঙ্গি মুখ্যত তাও্বিক বা অভিজ্ঞাতাভিওিক । পক্ষান্তরে ,নীতিবিদ্যার আলোচনাতে ভালো বা সৎ আচরণের ব্যাবহারিক বিচারবিবেচনা জড়িত বলে নীতিবিদ্যার আলোচনার দৃষ্টিভঙ্গি তাও্বিক হলেও গৌণভাবে ব্যবহারিক যোগ সম্পর্ক রয়েছে।

উপসংহার ঃ উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে ,মনোবিদ্যার সাথে নীতিবিদ্যার বেশ মিল থাবলেও নীতিবিদ্যা ও মনোবিদ্যঅ এক নয়। এটা অবশ্য ঠিক যে,নীতিবিদ্যার আলোচনার ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের জ্ঞানের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে বা নীতিবিদ্যার সাথে মনোবিজ্ঞানের একটা বলিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু তাই বলে আমাদের এটা ভুললে চলবে না যে,নীতিবিদ্যা আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান এবং মনোবিজ্ঞান বিষয়নিষ্ঠ বিজ্ঞান। নীতিবিদ্যা ও মনোবিদ্যা দুট স্বতন্ত্র বিদ্যা হলেও এদের সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ।


Post a Comment (0)
Previous Post Next Post