প্রতিবেদন কি? প্রতিবেদন কাকে বলে?

 প্রতিবেদন কি? বা প্রতিবেদন কাকে বলে? বিস্তারিত আলোচনা করা হলো

প্রতিবেদন কি? বা প্রতিবেদন কাকে বলে? বিস্তারিত আলোচনা করা হলো


প্রতিবেদন শব্দটি ইংরেজি Report -এর বাংলা পরিভাষা। রিপোর্ট শব্দটি আভিধানিক অর্থ হচ্ছে - সমাচার, বিবরণী বা বিবৃতি। তবে এসব অর্থের পরিবর্তে বাংলায় ‘প্রতিবেদন’ শব্দটিই অধিক প্রচলিত।

কোনা ঘটনা সম্পর্কে তথ্যভিত্তিক বর্ণানাত্মক বিবরণক্ েসাধারণত প্রতিবেদন বলা হয়। তবে কখনো কখনো কোনো সুনির্দিষ্ট ঘটনা বা বিষয়ে ককতৃপক্ষের নির্শেষে কোনো ব্যক্তি বা তদদন্ত কমিশন কনো খুঁটিনাটি অনুসন্ধানের পর সুপাশরশসহ যে বিবরণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রদান করে, তাও একধরণের প্রতিবেদন। এ ধরনের প্রতিবেদনকে অবশ্য তদন্ত প্রতিবেদন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

প্রতিবেদেনের পকার

প্রতিবেদন সাধারণত দুই ধরণের হয়-

১. সংবাদ প্রতিবেদন

২. প্রাতিষ্ঠানিক  প্রতিবেদন

সংবাদ প্রতিবেদন কাকে বলে?

সংবাদ পত্র প্রকাশেরে নিমিত্তে লিখিত প্রতিবেদনকে সংবাদ প্রতিবেদন বলে। নিজস্ব সংবাদদাতা ও প্রতিবেদক েএবং বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি সংবাদদ সংস্থার মাধ্যমে এসব সংবাদ প্রতিবেদন সংগ্রহ করা হয়।

প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন কাকে বলে?

কোনো প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব প্রশাসিনিক কাঠামে, কার্যাবলি, ঘটনা বা অবস্থঅ যাচাই করে সে সম্পর্কিত তথ্য, তত্ত্ব, উপাত্ত তুলে ধরে  যে বিবরণী প্রণয়ন করা হয়, তাকে প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন  বলে। এ ধরনের প্রতিদেন সাধারণকত কোনো ব্যাক্তি বা প্রবিষ্ঠান কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে লেখা হয়। যেমন: কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বার্ষিক বনভোজন বা বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বা গন্থাগার সম্পর্কে প্রতিবেদন, কোনো পরীক্ষাকেন্দে গোলযোগ সম্পর্কিত  প্রতিবেনদ, কোনো প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের ওপর ষান্মাসিক বার্ষিক কিংবা দ্বিবার্ষিক প্রতিবদেন , কোথাও সংঘটিত দুর্ঘটনা, চুরি, ডাকাতি কিংবা লটুটপাট সংক্রান্ত প্রতিবেদন।

প্রতিবেদনের যে সকল বৈশিষ্ট্য প্রয়োজন:

প্রতিবেদন রচনার ক্ষেত্রে নিচের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সচেতন থাকা কর্তব্য। নিচে তার বিস্তারিত আলোচনা  করা হলো

প্রতিবেদনের পরিকল্পিত রূপরেখা

আঙ্গিক বা গঠনকাঠামোর দিক থেকে প্রতিবেদনের স্বকীয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রতিবেদনের রচনার সময় েএকটি রূপরেখা তৈরি করে নিলে ভালো হয়, না হলে প্রতিবেদন সুন্দর ও  মানসম্মত হয় না।

প্রতিবেদন যথাযথ ও সংহত ভাষা ব্যবহার করা:

বাড়তি, অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রাসঙ্গিক তথ্যে যেন প্রতিবেদন ভারাক্রান্ত না হয়, সেদিকে বিশেষ লক্ষ রাখা দরকার। সে জন্য প্রতিবেদন রচনার সময় বাছািই করে কেবল অপরিহার্য তথ্যগুলোই সন্নিবিষ্ট করতে হবে।

বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবদেন:

প্রতিবেদনে হতে হবে বস্তুনিষ্ঠ। অর্থাৎ কার্যকর প্রতিবেদনে অতিরঞ্জন বা অতিশয়োন্তি যেমন থাকতে পারবে না, তেমনি তা কোনোভাবেই পক্ষপাতমূল হওয়া চলবে না। প্রকৃত ঘটনা ও তথ্য যথাসম্ভব নিরাবেদ ভাষায় স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করতে হবে।

সহজবোধ্য:

প্রতিবেদনের ভাষা হবে সহজ, সরল ও স্পষ্ট। কোনো বক্তব্য যেন দুর্বোধ্য ও দ্ব্যর্থবোধক না  হয়, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। প্রতিটি অনুচ্ছেদ শুরু করতে হবে প্রাসঙ্গিক বাক্য দিয়ে এবং প্রতিটি অনুচ্ছেদ আলাদা আলাদা বিষয় সুসংহতভাবে পরিবেশিত হবে।

প্রতিবেদনের সংগতিপূর্ণ উদ্দেশ্য:

প্রতিবেদনের একটি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে থাকে। প্রতিবেদন রচনার সময় মূল উদ্দেশ্য থেকে সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য যেন বিচ্যুত না হয়, সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।

প্রতিবেদনের প্রয়োজনীয়ত

প্রতিবেদন আধুনিক জীবনের অপরিহার্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। প্রতিবেদন বলতে একসময় কেবল পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদকেই বোঝানো হতো। কিন্তু সমপ্্রতি প্রতিবেদনের পরিসর সম্প্রসারিত হয়েছে। কোনো বিষয়ে সহেচনতা সৃষ্টি, যেমন- পরীক্ষায় দুর্নীতি, হাসপাতারে চিকিৎসার অনিয়ম এডিস মশার উপদ্রব প্রভৃতি বষিয়ের ওপর  রচিত প্রতিবেদনের মাধ্যমে জনসাধারণের মাধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য সংবাদপত্রের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আিইন-আদালত, ব্যবসা -বাণিজ্য ্র কর্মজীবনের বিচিত্র জটিল ক্ষেত্রে প্রতিবেদনের উপযোগিতা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোনো সমস্যা ও সংকটে প্রতিবেদনের মাধ্যমে যে তথ্য পাওয়া যায়, তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেও সংকট থেকে উত্তরণের পথ পাওয়া যায়।

অতএব কোনো নির্দিষ্ট বিষিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ, সংগঠন, নির্শেনা, নিয়ন্ত্রণ , ফলাফল নিরূপণ, সমন্বয় সাধন প্রভৃতি ক্ষেত্রে  প্রতিবেদন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে । বিশেষত তদন্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমেত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রামাণ্য দলিল হিসেবে গণ্য হয় প্রতিবেদনটি। সুতরাং আধুনিক জীবনে প্রতিবেদনের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

প্রতিবেদন তৈরি করতে  প্রতিবেদকের দায়িত্ব:

প্রতিবেদন তৈরি করার ক্ষেত্রে একজন প্রতিবেদককে প্রাথমিকভাবে তিনটি কাজ করতে হয়-

১. পর্যবেক্ষণ

২. লিপিবদ্ধ, শ্রুতিবদ্ধ বা দৃশ্যবদ্ধকরণ

৩. প্রতিবেদন প্রণয়ন

প্রতিবেদককে প্রত্যক্ষ ঘটনার সাক্ষী হেতে হয়্। অথবা কোনো ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর সে সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করতে হয় । অনেক সময় প্রতিবেদন রচনার ক্ষেত্রে হয়তো অতীতে ঘটে যাওয়া  কোনো ঘটনার সঙ্গে তাকে যোগসূত্র রচনাও করতে হয়। এ ক্ষেত্রে প্রতিবেদক ইতিহাস লেখকের কাজ করে থাকেন। প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রেও প্রতিবেদককে সাধারণ ৬ টি ‘ডব্লিউ’ ( Who, What, When, Whrere, Why, How) দ্বারা প্রশ্নের মাধ্যমে বিষয়ের স্পষ্টতা আনতে হয়। তবে সব ক্ষেত্রেই প্রতিবেদন হতে হয় তথ্যনির্ভর। মনে রাখা দরকার, যথাযথ তথ্য ছাড়া প্রতিবেদন বস্তুনিষ্ঠ হয় না।  উপযুক্ত পর্যবেক্ষণ. যথাযথ পর্যালোচনা, প্রয়োজনীয় বিচার-বিশ্লেষণ ও যথেষ্ট সতর্কতার সাথে প্রতিবেদন রচনা কররতে হয়। প্রতিবেদন সাধারণত দুই থেকে তিন পৃষ্ঠার  মধ্যে শেষ করা বাঞ্ছনীয়। তা ছাড়া প্রতিবেদন চিত্র, নকশা, সারণি ইত্যাদি সংবলিত বাঁধাই করা খাতার আকারেও তৈরি হতে পারে।

প্রতিবেদন প্রস্তুত প্রক্রিয়া

ক. সংবাদ প্রতিবেদন প্রস্তুত প্রক্রিয়া:

১. শিরোনা, হতে হয় প্রাসঙ্গিক। শিরোনামটা এমন হতে হয় যেন পাঠক এই সংবাদের প্রতি আকৃষ্ট হয় বা সহজে এর প্রয়োজনীয়ত উপলব্ধি করতে পারে।

২. বর্ণনা আকর্ষণীয় হতে হয়। বর্ণনা বেশি হলে পাঠক বির্কত হতে পারে। সংবাদ প্রতিবেদন তৈরির সময় কোন শ্রেণির পাঠকের জন্য লেখা হচ্ছে তা বুঝতে হয় । পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী বর্ণনা সংক্ষিপ্ত বা বিস্তৃত হতে পারে।

৩. সংবাদ প্রতিবেদনে নির্ভররযোগ্য উৎসের কথা উল্লেখ করতে হয়। অনেক সময় যাঁ কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়, তিনি তাঁর নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক থাকেন। এ রকম ক্ষেত্রে লেখা হয় ‘নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সূত্রে জানা গেছে ইত্যাদি।

খ. প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন:

স্থান-কাল-পাত্র: প্রতিবেদন শুরু হয় স্থান কাল-পাত্রের বর্ণনা দিয়ে। মূলকথা বা সারাংশ লিখতে হয় ভূমিকা হিসেবে।

১.  প্রতিবেদনের সাধারণত কয়েকটি অংশ থাকে।  েএগুলোর ধারাবাহিকতা রক্ষা করে লিখতে হয়। সূচনাংশে থাকে কর্তৃপক্ষের নিকট পত্র। এরপর মূল প্রতিবেদন। সবশেষে থাকে প্রতিবেদন রচনা সংক্রান্ত তথ্য।

২. প্রতিবেদন রচনা সংক্রান্ত তথ্যে প্রতিবেদকের নাম, ঠিকানা ছাড়াও থাকে প্রতিবেদন রচনার সময়, তারিখ ইত্যাদি।

৩. প্রতিবেদন খামে ভরে উপস্থাপন করাই বিধিসম্মত। তািই পাররীক্ষার খাতায় প্রতিবেদনের শেষে খাম আঁকতে হয়।

৪.  যে বিষয়ে প্রতিবেদন লেখা হচ্ছে তার  সামগ্রিক অবস্থার বর্ণনা থাকবে। মূল বিষয়ের বৈশিষ্ট্য ও বৈশিষ্ট্যসমূহেরর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বিস্তারিত উল্লেখ করতে হয়।

৫. মূল ঘটনার সময় কোন উৎস থেকে তথ্য পাওয়া গেছে তা উল্লেখ করতে হয়।

৬. বিশেষজ্ঞের নাম-পরিচয়সহ তার মতামত বা মন্তব্য থাকবে েএ অংশে।

৭. বিষয় পর্যালোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্তত গ্রহণ বা সিদ্ধান্তমূলক মন্তব্য থাকে সবশেষে।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post