রাষ্ট্রবিজ্ঞান কাকে বলে ?

 রাষ্ট্রবিজ্ঞান কাকে বলে ?রাষ্ট্রবিজ্ঞা বলতে কী বুঝ?

রাষ্ট্রবিজ্ঞান কাকে বলে ?



উওরঃ

ভূমিকাঃ

সাধারণভঅবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলতে সে বিষয়টিকে বুঝায় ,যা সমাজবদ্ধ মানুষের রাজনৈতিক বা রাষ্ট্রনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। তবে রাষ্ট্রের সংখ্যা এবং রাষ্টের পরিধি বৃদ্ধি পা্ওয়ার রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞায়ও পরিবর্তন এসেছে। নিম্নে এ সম্পর্  আলোচনা করা হলোঃ

রাষ্ট্রবিজ্ঞানঃ রাষ্টবিজ্ঞান শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Political scienice । এটি এসেছে গ্রিক শব্দ poliy থেকেযার অর্থ নগর ।প্রাচীন গ্রিস ও রোমে প্রতিটি নগরকে একটি রাষ্ট্র হিসেবে গণ্য করা হতো। তাই আমরা বলতে পারি নগর রাষ্ট্র বা রাষ্ট সম্পর্কে যে বিজ্ঞান আলোচনা করে তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞান।

বিভিন্ন দার্শনিক বিভিন্নভাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দিয়েছেন।যথাঃ

অধ্যাপক লাস্কি (prof.Laski),‘‘সংগঠিত রাষ্ট্রের প্রেক্ষিতে মানবজীবনের আলোচনাই হচ্ছে রাষ্ট্রবিজ্ঞান।’’(political science concerns itself with the life at men in relation to organised state)

ডার্লিউ,ডাব্লিউ,উইলোবি(W.W.Willoughy)এর মতে,‘‘রাষ্টবিজ্ঞান বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনাবলির প্রকৃতি নির্ণয় করেে এদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক ও যোগসূএ স্থাপন করে।’’

অধ্যাপক গেটেল (prof.Gettle)এর মতে,‘‘রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্রের অতীত ,বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা কেরে।’’(political science is the study of the state in the past .present and future.)

উপসংহারঃ উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে ,রাষ্ট্রবিজ্ঞান হচ্ছে রাষ্ট্রস্পর্কি জ্ঞান। যা রাষ্ট্রের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্বরূপ আলোচনা কর।রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতি আলোচনা কর।রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্বরূপ বর্ণনা কর।

উওর ঃ
ভূমিকাঃ

সামাজিক বিজ্ঞানের একটি অন্যতম শাখা হলো রাষ্ট্রবিজ্ঞান। বিশ্বের আর্থসামাজিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার দ্রুত পরিবর্তনশীলতা ও অগ্রগতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতিতে প্রভাব ফেলছে। রাষ্ট্র যেমন বিভিন্ন  ঐতিহাসিক বিবর্তনের মধ্যে  দিয়ে বিভিন্ন রূপ ধারণ করেছে তেমনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতিতেও সূচিত হয়েছৈ নানাবিধ পরিবর্তন। এর ফলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতি নির্ণয় করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতি বা স্বরূপ ঃ একটি সুশৃঙ্খল বিজ্ঞান হিসেবে বর্তমানে রাষ্ট্রবিজ্ঞনের নিয়ে উল্লিখিত প্রকৃতিগুলো চিহিৃত করা যায়।

১.আদর্শমুখী বিজ্ঞানঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান একটি আদর্শমুখিী গতিশীল বিজ্ঞান ।কেননা এটি রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে মানুষকে নিয়ে আলোচনা করেে েএকত্রে ছকবাঁধা পদ্ধতি অনুসরণ করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার হলেও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ সুনির্দিষ্ট নিয়মি তি মেনে সঠিক সিদ্ধঅন্তে উপনীত হওয়ার ষ্টো করেন। এতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাষ।রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ আদর্শ ও ম্যূবোধ বিসর্জন দিতে চান না।

২.রাজনৈতিক প্রতিষ্টানঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃ তি অনেকটা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক ।কেননা রাষ্ট্রবিজ্ঞান সংবিধান ,সরকারি কাঠামো ,রাজনৈতিক দল.চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী ,এলেট ,আমলাতন্ত্র ইত্যাদি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্ েব্যাপক আলোচনা করে।আর এসব প্রতিষ্টানের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সরকার সঠিকভাবে পরিচালিত হয়।

৩.ক্ষমতাকেন্দ্রিক আলোচনা ঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতি ক্ষমতাকেন্দ্র্রিক ।এজন্য বর্তমানে রাজনৈতিক ‘ক্ষমতার রাজনৈতি(power politics) ‘বলা হয়। আধূনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানিগণ ক্ষমতাকেন্দ্রিক কার্য কলাপের বিশ্প্রলেষণকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে হিসেবে অভিহিত করেছেন।এ প্রসঙ্গে   Alam R.Ballবলেন, ``plitical power is a key concept in the study of politics.''রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রবার্ট ডাল রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে ক্ষমতা ,শাসন ও কর্তৃত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করেছেন।

৪.আইন প্রনয়নঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি অন্যতম প্রতিপাদ্য বিষয় হলো আইন। সার্বভৌমত্বের নির্দেশকেই আইন হিসেবে গণ্য করা হয়। রাষ্ট্রের পক্ষেই সরকার আইন প্রণয়ন করে শাসনকার্য পরিচালনা ও শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করে। 

৫.নৈতিকতাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান নৈতিকতা নির্ভর ।রাষ্ট্রবিজ্ঞান কেবলমাৈএ রাষ্ট্রের প্রকৃতি নিয়েই আলোচনা করে না সেই সাথে উচিত-অনুচিত,ভাল-মন্দ ইত্যাদি বিষয় নিয়েও পর্যালোচনা করে। ইহা মানুষের নৈতিক বিচারের প্রতি দৃষ্টিপাত করে। 

৬.রাজনৈতিক আচরণের পর্যালোচনা ঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান হলো মানুষের রাজনৈতিক আচরণের কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয়। এটি  মানুষেল রাজনৈতিক আচরণ মূল্যায়ন করে। এর মাধ্যমে ব্যক্তি,গোষ্ঠী ও দলের রাজনৈতিক আচার আচরণ বিশ্লেষণ করা হয়। 

 উপর্যুক্ত আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে,রাষ্ট্র ও এর বিভিন্ন সংগঠণ  এবং রাষ্ট্রীয় কার্যকলাপের বিশ্লেষণধর্মী পর্যালোচনাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পৃকৃতিভিওিক ।রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতি সম্পর্কে অধ্যয়ন করলে রাষ্ট্রশাসন পরিচালনা করা সহজসাধ্য হয়।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি বা পরিসর বা বিষয়বস্তু ঃ নিম্মে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি বা বিষয়বস্তু সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলোঃ

১.রাষ্ট্রচিন্তা বা রাষ্ট্রদর্শনঃ কোন কালের বা যুগের রাজনৈতিক চিন্তাধারার সমষ্টি হচ্ছে রাষ্টচিন্তা বা রাষ্ট্রদর্শন । মূলত রাষ্ট্রকে কেন্দ্র করেই বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ এসব চিন্তাধারা বা ধ্যানধারণঅ উপস্থাপন করেছেন। সাধারণথ রাষ্ট্রচিন্তা তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়ে থাকে। যথাঃ১.প্রাচীন যুগের রাষ্ট্রচিন্তা ২. মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তা এবং ৩. আধুনিক যুগের রাষ্ট্রচিন্ত প্রাচীনকালে সক্রেটিস ,প্লেটো,এরিস্টটর,মধ্যযুগের সেন্ট আগস্টিন ,একুইনাস এবং আধুনিক যুগের ম্যাকিয়ার্ভেলি লক,রুশো ,মিল,বেস্হাম,মার্কস ,এঙ্গেল ,লাস্কি প্রমুখেল রাষ্ট্রচিন্তা রাষ্ট্রবিজ্ঞানে গুরুত্বের সাথে আলোচিত হয়ে থাকে। 

২. রাজনৈতিক তও্বঃ রাষ্ট্রের বাস্তবসম্মত আলোচনাকে রাজনৈতিক তও্ব বলা হয়। রাষ্ট্র ,সরকার ,সার্বভৌমও্ব স্বাধীনতা,সাম্য আইন,অধিকার,কর্তব্য ,জাতি ,জাতীতয়তা ,জাতীয়তাবাদ আন্তর্জাতিকবাদ প্রভৃতি রাজনৈতিক তও্বের গুরুত্বপূর্ণ বিষয হিসেবে স্বীকৃত ।এগুলোর আলোচনা ছাড়া রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অসমাপ্ত।

৩.রাজনৈতিক মতবাদঃ রাজনৈতিক মতবাদ  ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধিভূক্ত। রাষ্ট্রের উৎপওি ও পরিচালনা সং্ক্রান্ত বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। যেমন-ঐশ্বরিক বা সৃষ্টিমূলক মতবাদ ,বলপ্রয়োগ মতবাদ ,বিবর্তনবাদ ,কর্তৃবাদ ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ,সর্বাত্নকবাদ,সমাজতন্ত্র ,গণতন্ত্র ,পুঁজিবাদ,সাম্রাজ্যবাদ প্রভৃতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়বস্তুর অন্তর্ভুক্ত। 

৪.রাজনৈতিক প্রতিষ্টানঃ রাষ্ট্রের কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য রাষ্ট্রের অভ্যস্তরে কতকগুলো প্রতিষ্ঠান সক্রিয় থাকে যেমন-সংবিধান ,সরকারের বিভিন্ন অঙ্গ,রাজনৈতিক দল,চাপ  সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী ,নেতৃত্বে ,জনমত,নির্বচকমন্ডলী প্রভৃতি। 

৫.প্রশাসনিক সংগঠনঃ সরকারকে গতিশীল ও সক্রিয় রাখে প্রশাসনিক সংগঠনসমূহ । লোকপ্রশাসন রাষ্ঠবিজ্ঞান একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রশাসনিক সংগঠন পরিকল্পনা ,সিদ্ধান্ত গ্রহণ,বিকেন্দ্রীকরণ,েএলিট ,আলাতন্ত্র প্রভৃতি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষযবস্তুর অন্তর্ভুক্ত। 

৬.রাজনৈতিক আচরণঃ আচরণবাদী রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে আচরণ সং্ক্রান্ত বিজ্ঞান হিসেবে অভিহিত করেছেন।একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থায় জনগণের আচরণ,মনোভাব ,দৃষ্টিভঙ্গি ও সংস্কৃতি রাজনীতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। বর্তমানে রাষ্ট্রবিজ্ঞান এসব বিষয় নিয়েও আলোচনা করে। 

৭.তুলনামূলক রাজনীতিঃ তুলনামূলক রাজনীতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধির অন্তর্ভুক্ত। পূর্বে শুধূমাএ পাশ্চাতের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে তুলনা করা হতো। কিন্তু বর্তমানে প্রাচ্য,পাশ্চাত্য ,মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাজনীতির সঙ্গে তুলনা করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের েএকটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়ে থাকে।

৮.আন্তর্জাতিক রাজনীতিঃ বিশ্বায়নের এ যুগে আন্তর্জাতিক ঘটনাবলি নানাভাবে জাতিয় জীবনের উপর প্রভাব কিস্ত করে থাকে। আন্তর্জাতিক রাজনীতি এসব প্রভাব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আলোকপাত করে। ফলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আন্তর্জাতিক রাজনীতির অন্তর্ভুক্ত বিষযাবিতি যেমন-কুটনীতি,পররাষ্ট্রনিতি ,আন্তর্জাতিক বিরোধ ,শান্তি ,দ্বন্দ্ব এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ঘটনাবলির সবিস্তার আলোচনা করে।

উপসংহারঃ উপর্যক্ত আলোচনা শেষে বলা  যায়,রাষ্ট্র ও এর বিভিন্ন সংগঠন এবং রাষ্ট্রীয় কার্যকলাপের বিশ্লেষণধর্মী পর্যালোচনাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধির অন্তভূর্ক্ত ।আবার অনেকে বলেছেন ,মানুষের জন্ন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সকল কায়কলাপেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি বা বিষষবস্তুর অণ্তর্ভুক্ত। মোটকথা রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করতে হলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতি  ও পরিধি সম্পর্কে জানা আবশ্যক।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post